করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় ২/৩ ভাগ অফিস কর্মী বাসায় থেকে অফিসের কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রায় অর্ধেক কর্মী বিভিন্ন ব্যথা ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন! বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, দীর্ঘ মেয়াদে বাসায় অফিস করার কারণে ৪৫% অফিস কর্মী ব্যাক ও জয়েন্ট পেইন এবং ৪৮% অফিস কর্মী মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
বাসায় অফিস এর জায়গা কোথায়?
খুবই কম সংখ্যক ভাগ্যবান অফিস কর্মী আছেন, যাদের বাসায় অফিসের কাজ করার জন্য আলাদা একটা রুম আছে, তাই বাধ্য হয়ে অফিস কর্মীকে গতানুগতিক অফিস এর সুবিধা ছাড়াই ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, বেড রুমে বসেই প্রতিদিন লম্বা সময় কাজ করতে হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে অনেকেই কাজ করার জন্য ডেস্কে কিংবা ডাইনিং টেবিলে বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন।
অফিস এমন একটি কাজের জায়গা যেখানে আপনি প্রতিদিন যাচ্ছেন আসছেন, অফিসের ভিতরে হেঁটে অন্য কলিগদের সাথে লাঞ্চে যাচ্ছেন, অফিসের কিচেনে যাচ্ছেন, সভায় অংশ নিতে সভাকক্ষে যাচ্ছেন, এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে যাচ্ছেন, রিলাক্স হতে অফিসের বাহিরে যাচ্ছেন, কলিগদের সাথে সামাজিক মেলামেশা করছেন, মন খুলে আড্ডা দিচ্ছেন ইত্যাদি। কিন্তু বাসায় অফিস করায় এই গুলো প্রায় বন্ধ, আর বাসায় আপনি কোথায় বা যেতে পারেন? হয় বাথরুম, না হয় কিচেনই গেলেন, নতুবা কখনো বাসার ছাদে, তারপর আবার সেই অফিসের কাজে বস। তাছাড়া বসে বসে অফিসের কাজ এর পাশাপাশি অসংখ্য ভিডিও কলে অংশগ্রহণ করতে হয়। বাসায় অফিস করায় ফিজিক্যাল এক্টিভিটি এবং মুভমেন্ট অনেকাংশে কমে যাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক আইসলেশন বেড়েই চলছে। ফলে অসংখ্য কর্মী ব্যাক, নেক, বিভিন্ন জয়েন্ট, হাড়, মাসল পেইন, বিভিন্ন মানসিক স্ট্রেস, এঞ্জাইটি, ডিপ্রেশনে ভুগছেন।
করণীয়:
পুঁজিবাদী দুনিয়ার চিকিৎসাসেবা নামের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সহজ উপায়ে রোগ বা সমস্যা প্রতিরোধ এর উপায় গুলোর সাথে বিরোধ আছে। চিকিৎসা যখন ব্যবসা, তখন রোগের প্রতিরোধ নিয়ে কিংবা মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস গড়ার বিষয়ে অনীহা লক্ষ্যণীয়। আর একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগ বা সমস্যা প্রতিরোধ প্রতিকার নিয়েই তাঁর প্রধান কাজ, যাতে মানুষ শারীরিক সক্রিয়তা আর নিয়মিত এক্সারসাইজ করে সুস্থ থাকে।
করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন ব্যথা ও মানসিক সমস্যা প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ:
* বাসায় কাজের জায়গাটা যেমন চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও অন্যান্য অফিস টুলস আরামদায়ক হেলথি রাখার চেষ্টা করুন। ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে বসা থেকে উঠে দাঁড়ান, পারলে কিছুটা হেঁটে আবার কাজে মনোনিবেশ করুন।
* বসে বা শুয়ে ১০ মিনিট করে দিনে ২ বার ডিপ ব্রিথিং (লম্বা নিঃশ্বাস নিন এবং সম্পূর্ণ নিঃশ্বাস ছাড়ুন)।
* যে যেভাবে পারেন বাসার ভিতর কিংবা বাসার ছাদে কিংবা বাসার নিচে কিংবা বাসার আশেপাশে সময় নিয়ে প্রতিদিন হাঁটুন/সাইক্লিং করুন/জগিং করুন- সময় অন্তত ৪০-৬০ মিনিট।
* বাসার কাজ যেমন পরিষ্কার পরিছন্নতাসহ অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে এক্সারসাইজ এর একটি বড় অংশ হয়ে যাবে।
* হাত, পা, মেরুদণ্ডের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ যেমন উঠাবসা করা, হাত উপর নিচ করা ও পাশে উঠানো, হাত পা কে চারদিকে ঘোরানো, পা দিয়ে লাথি মারা, লেগ প্রেস করা, হাত দিয়ে বক্সিং মারা, শুয়ে পা দিয়ে সাইক্লিং করা, লাঞ্জিং করা, স্কয়াট, ব্রিজিং এক্সারসাইজ সহ অন্যান্য এক্সারসাইজ ১০ বার করে দিনে ২ বার করতে পারেন ।
* ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এর পরে কয়েক মিনিট কিছু ডাইনামিক ও স্টেটিক স্ট্রেচিং করুন।
* দিনে অন্তত ১০ মিনিট শব্দ করে হাসুন।
* নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন এবং প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
উল্লেখ্য, কারও ব্যথাজনিত সমস্যা থাকলে বা কোন এক্সারসাইজে অসুবিধা বোধ করলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে উপরের পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন।
লেখক: ডা. দলিলুর রহমান, সিনিয়র কনসালটেন্ট, বিপিএইচ এস সি জি, গুলশান, পেইন, ফিজিওথেরাপি এন্ড স্পোর্টস ইনজুরি স্পেশালিস্ট, ইমেইল-manipsart@gmail.com.