করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। ফলে লকডাউনে চারদেয়ালের মাঝে বন্দি থেকে থেকে বাচ্চারা অস্থির হয়ে উঠছে। মানসিক সমস্যা, হতাশায় ভুগছে অনেক শিশু। আর তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে শুধুমাত্র অভিভাবক রূপে নয়, বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে হবে।
বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। কারণ, আমাদের সমাজে বেশিরভাগ বাচ্চারাই প্রাপ্তবয়স্কদের খুব একটা বিশ্বাসের চোখে দেখে না। এটার জন্য অবশ্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দায়ী। তাই সন্তানের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হলে তাদের মতো করে ভাবতে হবে। কঠিন নয়, নিজেদের ছেলেবেলা স্বরণ করলেই হয়ত অনেক পথ পেয়েও যাবেন।
সন্তানের কথা শুনুন
প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বাচ্চাদেরও নিজস্ব অনুভূতি, পছন্দ-অপছন্দ, মতামত রয়েছে। তাই তাদের কথাও শুনুন। এতে বাচ্চাদের মানসিকতা বুঝতে পারবেন না। বড়রা অনেকসময় বাচ্চাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে ব্যর্থ হন কেননা অজান্তেই তারা বাচ্চাদের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে ফেলেন। সন্তানকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবলে, তার নিজের প্রতিও বিশ্বাস জন্মাবে এবং আপনার সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
উপদেশ দেওয়ার আগে ভাবুন
জেনারেশন গ্যাপ বন্ধুত্বের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। সন্তানকে কোনো ব্যাপারে তিরস্কার করার আগে ভেবে দেখুন ওই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে আপনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে কি না। যে উপদেশই দেন না কেনো, প্রতিদিনের জীবনে আপনি আদৌ তা প্রয়োগ করেন কিনা তা আগে ভাবুন।
খেলার সঙ্গী হবেন
আপনার সন্তানের সঙ্গে খেললে শুধু যে তার বন্ধু হয়ে উঠতে পারবেন তাই নয়, অনাবিল আনন্দ উপভোগ করার সুযোগও পাবেন। সংসার, অফিসের হাজার দায়িত্বের পর এমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মজা করার সুযোগটা আর কোথাও পাবেন না। তাছাড়া তার খেলার সঙ্গী হলে, খেলাচ্ছলে সে কী খেলছে তার উপরেও তদারকি করতে পারবেন।
বিশ্বস্ততা অর্জন করুন
বন্ধুত্বের প্রথম শর্তই হলো একে অপরকে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে সমস্ত কথা শেয়ার করা। বাচ্চারা সাধারণত ভয় পায় কথা বলতে কারণ বড়রা মন দিয়ে না শুনে বরং দোষারোপ করবে। বাচ্চারা যদি কোনো ভুল আপনার কাছে স্বীকার করে তবে তাকে না বকে খুব সহজ করে তার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ও যেন আপনাকে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্তটি নিয়ে কখনো আক্ষেপ না করে।
সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন
সব সময় সন্তানের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজকে উৎসাহিত করবেন। প্রয়োজন হলে অবশ্যই সন্তানের কাজ বা প্রচেষ্টার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু চেষ্টা করবেন ওর সমস্ত কাজে পাশে থাকতে। এতে করে আপনাকে সে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করবে। আর একবার যদি সন্তানের বিশ্বাসী বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন তবে তাকে মানুষ করাও অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।