ঘুরেছেন ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে। পড়ালেখা ও চাকরির সুবাদে দেশের বাইরে ছিলেন টানা নয় বছর। এরপর দেশে ফিরে আসা ও চাকরিতে যোগদান করা। পেশায় তিনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার, অ্যানিমেশন আর্টিস্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু বাধ সাধে নিজের ও নিজস্ব কিছু করার প্রবল ইচ্ছা।
খেতে বরাবরই ভালোবাসেন তিনি। দারুণ ভোজনরসিক মাহমুদ খাইরুল বিভিন্ন দেশে ঘুরে নানান ধরনের খাবারের স্বাদ আস্বাদন করেছেন। খাবারের মাঝে স্বাদের তারতম্য ও বৈচিত্র খুঁজে বেরিয়েছেন।
দেশের একদম ছোট থেকে শুরু করে সুপরিচিত প্রায় প্রতিটি বার্গার শপে ঘুরে ঘুরে বার্গার খেয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন- দোকান ভিন্ন হলেও, বার্গার তৈরি ও বার্গারের স্বাদের ভিন্নতা ও পার্থক্য খুবই কম। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে লম্বা সময়ের পরিকল্পনা ও নিজের প্যাশন থেকে সম্প্রতি তিনি চালু করেছেন বার্গার শপ ‘ডার্ক বার্গ’।
দোকানের এমন নামকরণের পেছনের কারণটি হলো, ডার্ক বার্গের প্রতিটি বার্গার বান নিজেদের তৈরি। মালয়েশিয়ান রেসিপিতে কোকোয়া পাউডার ব্যবহারে তৈরি করা এই বানগুলোর বর্ণের সাথে মিল রেখেই দোকানের নাম হয়েছে ডার্ক বার্গ। শুধু বার্গারের কালো রঙ নয়, প্রতিটি বার্গারের নামেও রয়েছে টুইস্ট। বার্গারের এই নামগুলোও তারই রাখা।
অন্যান্য বার্গার শপ থেকে ডার্ক বার্গে ব্যতিক্রম ও নতুন কী পাওয়া যাবে, বার্তাটোয়েন্টিফোরের এমন প্রশ্নের মুখে খাইরুল চটপট উত্তর দিলেন, ‘আমরা সাধারণত যে সব বার্গার খাই, প্রায় সব বার্গারের স্বাদ একই, একই ঘরানার সসের ব্যবহার, ভিন্নতা নেই বললেই চলে। একেবারে নতুন স্বাদ আনতে ডার্ক বার্গের বার্গারে ব্যবহার করা হয়েছে পিনাট বাটার, বাদাম, কিশমিশের সস, পেস্তা ও বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পনির। বার্গারে সাধারণত একই ধরনের পনির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের বার্গারে বেশ কয়েক প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন পনির পাওয়া যাবে।’
‘রিইন্ট্রডিউসিং বার্গারস ইন বাংলাদেশ’ থিমকে সামনে রেখে ডার্ক বার্গের মেন্যু তৈরি করা হয়েছে। যেখানে পাশ্চাত্যের স্বাদের সাথে দেশীয় ঝাল আমেজের মিশ্রণে বার্গারের স্বাদ তৈরি করা হয়েছে। ডার্ক বার্গের প্রতিষ্ঠাতা খাইরুল আরও জানালেন, বার্গারের মান, ফ্রেশনেসের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই প্রতিটি বার্গার তৈরি করা হয়। বার্গার তৈরির বিভিন্ন উপাদান নিজ হাতেই বাজার করেন তিনি। মানের বিষয়ে কোন ছাড় নেই একদম।
চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা, তাও আবার বার্গার শপ দেওয়া, এমন সিদ্ধান্তে পরিবারের সমর্থন পেয়েছিলেন? এ প্রশ্নের মুখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে জানালেন, স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিকে খুব একটা সমর্থন পাননি পরিবারের মানুষের কাছ থেকে। কেউই বিষয়টি মানতে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু যখন দেখলেন এ কাজে তিনি খুব খুশি, বার্গার শপ চালু হওয়ার পর থেকে বেশ ভালো ক্রেতা সমাগম হচ্ছে, এখন পরিবারের সবাই খুশি, সাথে তার এ কাজে সমর্থনও দিচ্ছেন।
পরিবারের সমর্থনের কথায় ও গল্পে খাইরুল আরও বললেন, ‘শেফকে সাহায্য করার জন্য আমিও কাজ করি। বার্গার তৈরিতে সাহায্য করি, দোকানের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করি। এ সকল কাজ দেখে অনেকেই বলে- দেশের বাইরে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে এসে এখন এসব করছে! অথচ বাইরে একা থাকাকালীন সময়ে চাকরির পাশাপাশি নিজের রান্না করা, ঘর গোছানো একা হাতেই করতাম। তাই এখন এই কাজগুলো করাতে আমার কোন সমস্যাই হয় না। বলা যায় আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে।’
সদ্য চালু হওয়া ডার্ক বার্গে পাওয়া যাবে আট ধরনের বার্গার, ওয়েজেস, কয়েক ধরনের মিল্ক শেইক। সামনে পরিকল্পনাও রয়েছে গ্রিল স্যান্ডউইচ আনার। সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকার মাঝেই পাওয়া যাবে বেসিক বয়, ফ্যাটি হাবি, স্যাশি গার্ল কিংবা কিউটি পাই নামের এই বার্গারগুলো। আর ব্যতিক্রমী এই বার্গারগুলোর স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে হবে মিরপুর ডিওএইসএসের দারুচিনি ফুড কোর্টে বিকাল তিনটা থেকে রাত ১০টার মধ্যে। অবশ্য ছুটির দিনে দুপুর ১২টার সময় থেকেই খোলা থাকবে ডার্ক বার্গ।
আরও পড়ুন: খাবারের স্বাদে পরিপূর্ণতা আনবে ‘পূর্ণতা’
আরও পড়ুন: ফ্ল্যাগশিপ রেস্টুরেন্ট ও অ্যাপ নিয়ে পেয়ালার তৃতীয় শাখা