ভাবুন তো একবার, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন মুখের কয়েক স্থানে বেশ কয়েকটি নতুন ব্রণের উঁকিঝুঁকি! তখন কেমন লাগবে আপনার? নিশ্চয় প্রচন্ড বিরক্ত হবেন। মন খারাপও হবে কিছুটা। কেউই চান না নিজের চেহারার মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন অতিথির আগমন। হুট করেই ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া তেমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
কীভাবে এই সমস্যার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? সমাধানটি কিন্তু খুবই সহজ। নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে এসেনশিয়াল অয়েল। ব্রণের সমস্যা ও ব্রণের বিরক্তিকর দাগ দূর করতে দারুন উপকারি এই উপাদানটির জুড়ি নেই।
কী এই এসেনশিয়াল অয়েল?
ব্রণের সমস্যা ও ব্রণের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত পণ্য হলো এসেনশিয়াল অয়েল। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক লতা, গাছের পাতা, ফুল ও গাছের বাকলের রস থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে এই এসেনশিয়াল অয়েল। যার ফলে এই তেলকে অন্যতম বিশুদ্ধ পণ্য হিসেবে ধরা হয়। এসেনশিয়াল অয়েলে থাকা প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান সমূহ সকল ধরণের ত্বকের জন্য উপকারী। যা ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
আজকের ফিচার থেকে জেনে নিন ব্রণের সমস্যা কমাতে কার্যকরি ও ত্বকের জন্য উপকারী তিনটি এসেনশিয়াল অয়েলের নাম ও ব্যবহার।
টি ট্রি অয়েল
ব্রণের সমস্যায় টি ট্রি অয়েলকে অন্যতম ভালো এসেনশিয়াল অয়েল হিসেবে ধরা হয়। বেশ সহজলভ্য বলে অন্যান্য এসেনশিয়াল অয়েলের মাঝে টি ট্রি অয়েলের চাহিদাও বেশি। ব্যবহারের জন্য কটন বাড কিংবা তুলার প্যাডে অল্প পরিমানে টি ট্রি অয়েল নিয়ে আক্রান্ত স্থানে মাখিয়ে নিতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করলে ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমে যায় অনেকটা। তবে একদিনে একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে।
ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল
টি ট্রি অয়েলের পর দ্বিতীয় জনপ্রিয় ও সহজলভ্য এসেনশিয়াল অয়েল হলো ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল। এই এসেনশিয়াল অয়েলে রয়েছে প্রশান্তিদায়ক উপাদান। যা ত্বকের লুকায়িত সমস্যা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি আনতেও সাহায্য করে। তাই ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহার করতে হবে একটু ভিন্ন ভাবে।
ফুটন্ত গরম পানি একটি বড় পাত্রে নিয়ে তাতে ১০-১২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে মেশাতে হবে। পানির পাত্রের উপর ঝুঁকে মাথার উপরে একটি ভারি তোয়ালে দিয়ে দিতে হবে। এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত গরম পানির বাস্প নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে হবে। মিনিট পনের পরে তোয়ালের সাহায্যে মুখ মুছে নিয়ে কাপড়ের সাহায্যে মুখে বরফ লাগাতে হবে।
ল্যাভেন্ডার অয়েলে থাকা অ্যান্টিব্যক্টেরিয়াল উপাদান সমূহ মুখে নতুন ব্রণ দেখা দেওয়ার উপদ্রব কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুইবার ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
বাসিল এসেনশিয়াল অয়েল
বাসিল তথা তুলসী পাতার এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধে দারুন উপকারী। সাধারণত ত্বকের যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এই পাতা থেকে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েলের গুণাগুণও অনেক। এক গবেষণা থেকে জানানো হয়, বাসিল এসেনশিয়াল অয়েল ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে। যার ফলে কমে যায় ব্রণের প্রাদুর্ভাব।
বাসিল এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে হবে অ্যালোভেরা জেলের সাথে। দুই চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে দুই ফোঁটা বাসিল এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পর পরিস্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
দ্রুত ও ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন একবার এই মিশ্রনটি ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী একেকজনের ত্বকে ভিন্ন ভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েল বেশি কার্যকরি হয়ে থাকে।
এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারে অনেকের ক্ষেত্রে দ্রুত ফলাফল দেখা দিলেও, অন্যদের অপেক্ষা করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তবে নিয়ম মেনে ও নিয়মিত এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করলে, অবশ্যই ইতিবাচক ফলাফল দেখা দিবে।