সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ও প্রতিরোধে যে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বারংবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার মাঝে হাত পরিষ্কার রাখা অন্যতম। মূলত হাতকে যতটা পরিষ্কার রাখা যাবে, নিজেকে ততই নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।
কিন্তু হাত পরিষ্কার রাখা মানে সাবান ও পানিতে তাড়াহুড়া করে হাত ধুয়ে নেওয়া নয়। নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়া হলে তবেই জীবাণুকে দূর করা যাবে। সঠিক নিয়মগুলো পরিষ্কারভাবে জানা না থাকার ফলে অনেকেই সাধারণ ৬টি ভুল করে থাকেন হাত ধোয়ার সময়। সে ভুলগুলোকে সংশোধনের জন্যই আজকের ফিচারে তুলে আনা হল হাত ধোয়ার প্রধান ৬ ভুল।
দ্য জার্নাল অব ইনভারমেন্টাল হেলথে প্রকাশিত মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার ফল থেকে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত সময় (২০ সেকেন্ড) নিয়ে সাবান ও পানির সাহায্যে হাত পরিষ্কার করেন না, যা জীবাণু ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয়। এনওয়াইইউ ল্যাংগন হেলথের মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রশিনি রাজ জানান, বেশিরভাগ মানুষের গড় হাত ধোয়ার সময় হল ৬ সেকেন্ড মাত্র। ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধোয়া না হলে হাতে জীবাণু থেকেই যাবে। তাই যখনই হাত ধুতে হবে, অবশ্যই ২০ সেকেন্ড সময় মাথায় রেখেই হাত ধুতে হবে।
নিয়ম মোতাবেক ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে খুব ভালোভাবে হাত ধুলেন, কিন্তু শুধুই হাতের তালু ধোয়া হল এবং নখ ও আঙ্গুলের মাঝের অংশটুকুর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন, তবে কিন্তু কোন লাভই নেই। হাত ধোয়ার ২০ সেকেন্ড সময়ের মাঝে প্রতিটি নখের ভেতরের অংশ, দুই আঙ্গুলের মাঝের অংশটুকুও রয়েছে। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
হাত ধোয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়টিও বৃথা হবে যদি হাত ধোয়ার পর সঠিকভাবে হাত শুকানো না হয়। ভেজা ও আর্দ্রতাপূর্ণ স্থানে যেকোন ধরনের জীবাণু খুব ভালো ও দ্রুত বংশবিস্তার করে। তাই হাত ধুয়ে যদি হাত ভেজা রেখে দেন তাহলে ফলাফল শূন্য। হাত শুকানোর ক্ষেত্রে পেপার টাওয়েল সবচেয়ে ভাল হবে। পেপার টাওয়েল না থাকলে হেয়ার ড্রায়ারের সাহায্যে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ারের হ্যান্ডেলকে জীবাণুনাশক নিয়ে মুছে নিতে হবে।
রশিনি রাজ জানান, বেশিরভাগ মানুষ শুধুমাত্র ওয়াশরুম ব্যবহারের পরেই হাত ধোয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু সারাদিনেই বিভিন্ন কাজের পর হাত ধোয়া প্রয়োজন। বিশেষত ফ্লু ও ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে। এছাড়া যেকোন পাবলিক স্থান যেমন- লিফটের বাটন, দরজার হাতল, এটিএমের বাটনের মতো স্থানগুলো ব্যবহারের পর অবশ্যই খেয়াল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশিরভাগ মাইক্রোব সমূহকে দূর করতে কার্যকর। তবে অবশ্যই সকল জীবাণুকে দূর করতে পারে না এবং এতে বেশ ক্ষতিকর কিছু কেমিক্যাল থাকে। এছাড়া যারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক নিয়মে ব্যবহার করেন না এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর বিভিন্ন জিনিস ধরেন। এ কারণে শুধু হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কখনোই যথেষ্ট নয়। এর সাথে সাবানের সাহায্যে হাত ভালোভাবে ধোয়ার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
আলাদাভাবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানের দিকে ঝোঁকার কোন প্রয়োজন নেই। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, সাধারণ সাবনের সাথে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানের পার্থক্য খুবই সামান্য এবং দুই ধরনের সাবানই একই রকমভাবে কার্যকর।