বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সকল অফিসই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বলে কাজ কিন্তু থেমে নেই। সকলকেই নিজ নিজ বাসা থেকে নিয়ম ও সময় মেনে অফিসের যাবতীয় কাজ সেরে নিতে হচ্ছে। বাসায় বসে অফিস করার ক্ষেত্রে প্রথম প্রভাবটা মানসিক ক্ষেত্রে পড়ে। অফিসের পরিচিত ও অফিসিয়াল পরিবেশ ছেড়ে নিজ বাসার আরামদায়ক পরিবেশে কাজ করার জন্য নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ কিছুদিন সময় ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।
তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে প্রভাবটা পড়ে শারীরিক ক্ষেত্রে। খেয়াল করে দেখুন, অফিসে নিজ ডেস্কে টেবিল-চেয়ারে দিনের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করা হত। বাসায় অফিসের ক্ষেত্রে যা অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাবটি ধীরে ধীরে প্রকাশ্য হওয়া শুরু করে। তাই আজকের ফিচার থেকে জেনে রাখুন বাসায় বসে অফিসে কাজ সামলেও নিজেকে সুস্থ রাখতে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা অফিসের কাজ করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিল ঠিক করে নিতে হবে। দৈনিক এতোগুলো সময় বিছানায় কিংবা সোফায় আধশোয়া হয়ে কিংবা ঝুঁকে কাজ করা হলে, পুরো মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়বে। যা থেকে ঘাড়, পিঠ ও কোমরে ব্যথাভাব দেখা দেবে।
প্রতিটি অফিসেই ডেস্কটপের স্ক্রিন থেকে চেয়ারের দূরত্ব এবং স্ক্রিনের উচ্চতা নির্দিষ্ট করা থাকে। লম্বা সময় অফিসে কাজ করার ফলে যার সাথ অভ্যস্ততা গড়ে ওঠে। বাসাতে অফিস করার ক্ষেত্রে নিজের জন্য নির্দিষ্ট করা চেয়ার-টেবিলে ল্যাপটপের উচ্চতা ও দূরত্ব নিজের বসার স্থান থেকে অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। যদি ডেস্কটপ হয় তবে মনিটর সঠিক উচ্চতায় ও দূরত্বে আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। নতুবা কাজের সময় চোখ ও ঘাড়ে উপর বাড়তি চাপ থেকে চোখ ও ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা দেখা দেবে।
যতই বাসায় বসে কাজ করা হোক না কেন, কাজের ব্যস্ততা সময়কে পার করে দেয় চোখের পলকে। অনেক সময় খেয়ালও থাকে না যেন একই ভঙ্গিতে কয়েক ঘন্টা বসে কাজ করা হয়েছে। এতে করে মাসলের উপর চাপ তৈরি হয় এবং মাসল স্ট্রেইনিং হয়। যা থেকে পেশিতে চিনচিনে ও সুঁই বেঁধার মত অনুভূতি দেখা দেয়। তাই কাজের ফাঁকে শরীরকে ঝরঝরে রাখতে কিছুক্ষণ পরপর হাঁটাচলা করতে হবে। হাত উপরের দিকে টানটান করে রেখে স্ট্রেচিং করতে হবে। পিঠ বাকিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। এতে করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং মাসল স্ট্রেইনের সমস্যা দেখা দেবে না।
বাসায় বসে অফিসের কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে খাওয়ার সময়ে। বাসাতেই আছি, খেয়ে নিব একটা সময়ে- এই মনোভাব থেকে সকালের নাশতা দুপুরে ও দুপুরের খাবার বিকেলে খান অনেকেই। খাওয়ার এই অনিয়মে আপনার শরীর কিন্তু অভ্যস্ত নয়। হুট করে খাওয়ার সময়ের এই পরিবর্তন শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাই কাজ ও ব্যস্ততার সাথেই সঠিক সময়ে খাবারের কাজটি সেরে নিতে হবে। নতুবা ক্লান্তিভাব, পেটের সমস্যা, ক্ষুধামন্দসসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করতে পারে।
চেয়ার-টেবিলে প্রতিদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখুন, যেন কাজ শুরু করার পর হাতের কাছেই সবকিছু পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় ফাইল, ডায়েরি, কলম, ক্যালকুলেটর, মার্কার, নোটপ্যাড প্রভৃতি যেন কাজের সময় চট করে পাওয়া যায় এমনভাবে রাখতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে এইসব ছোটখাটো জিনিস খোঁজাখুঁজি করা মানসিক চাপ তৈরি করে।