হাকিমপুর লৌহ ক্ষেত্রে জিএসবির সমীক্ষা প্রস্তাব নাকচ

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 01:45:59

হাকিমপুর (দিনাজপুর) লৌহ ক্ষেত্রের জিএসবির প্রস্তাবিত ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। লৌহ ক্ষেত্রটি লিজিংয়ের পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জিএসবি (বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর) লৌহ ক্ষেত্রটির ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে। ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব আলীহাট আয়রন ওর ডিপোজিট এট হাকিমপুর প্রকল্পের জন্য ২২৮ কোটির ৮৬ লাখ টাকার ডিপিপি করা হয়।

খনির মজুদ নির্ণয়, মাইন ডেভেলপমেন্টের সম্ভাব্যতা যাচাই, উত্তোলনযোগ্য মজুদ, পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ, মাইন ডেভেলপমেন্টের ফলে খনির আশপাশের পানির স্তরের উপর প্রভাব নির্ণয়, খনন পদ্ধতি নির্ণয়, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

চলতি অর্থবছরে নতুন এডিপিতে মধ্যম অগ্রাধিকার অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যার মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সাল। প্রকল্পের আওতায় ৫০টি অনুসন্ধান কূপ, ১০টি পর্যবেক্ষণ কূপ, ২টি উৎপাদন কূপ, ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে টপোগ্রাফিক সার্ভে, ইআইএ, ইএমপি, রিসেটেলমেন্ট পরিকল্পনা, এবং ৩ডি সিসমিক সার্ভে করতে চায় জিএসবি।

জিএসবির এই পরিকল্পনা কোভিডের অজুহাতে আটকে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা তার মতামতে বলেছে, গত ২৬ আগস্ট তারিখে সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জিএসবিকে প্রকল্পটির অনুকূলে অর্থ প্রাপ্তির জন্য কনসেপ্ট নোট প্রেরণ করতে বলা হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়, কোভিড ও বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে অর্থের সংস্থান করা সহজ হবে না। জ্বালানি বিভাগের নিকট প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাই লৌহ আকরিক ক্ষেত্রটি নিশ্চিতকরণ এবং সম্ভাব্য লিজিংয়ের বিষয়টি সভায় আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।

জিএসবির পরিচালক (ভূতত্ত্ব) মঈন উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন সেখানে প্রাথমিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে চার নম্বর কূপ খননের কাজ চলছে। লিজিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। কোনো কিছুই ফাইনাল হয়নি। আমাদের কাছে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেইভাবে কাজ করবো।

জিএসবির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) যুগ্ম সচিব মহ. শের আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, একটি সভা হয়েছে, এ বিষয়ে এখনই বলার মতো কিছু নেই।

২০০০ সালে দিনাজপুরের হাকিমপুর থানার আলীহাট এলাকায় জিএসবি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে চৌম্বকীয় আকর্ষণ রেকর্ড করা হয়, যাতে চৌম্বকীয় পদার্থ বা ম্যাগনেটিক বডির উপস্থিতির আভাস মেলে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ভূপদার্থিক (ম্যাগনেটিক) জরিপ পরিচালনা করে জিএসবি। এতে একটি কূপ খনন করা হয়। কূপে স্বল্প গভীরতায় ৯২ মিটার পুরুত লৌহ আকরিকের লেয়ার আবিষ্কার করা হয়। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে আরও দু’টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। এতে বিভিন্ন গভীরতায় ১৫৬ এবং ২০ মিটার পুরু লেয়ারের সন্ধান নিশ্চিত করা হয়।

কূপে ৪০৫ মিটারের কম গভীরতায় লোহার আকরিকের সন্ধান পাওয়া যায়। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লৌহ আকরিকের খনির তুলনায় কম। কূপ থেকে প্রাপ্ত ৮০টি নমুনা জিএসবির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে ৬৫ শতাংশের অধিক আয়রন-অক্সাইডের উপস্থিতি বিদ্যমান। বিশ্বের অন্যান্য উন্নতমানের খনির সমতুল্য ক্ষেত্র বিশেষে অধিক। বিশ্বের উন্নতমানের খনিগুলোতে লোহার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের মতো। এসব বিবেচনায় ক্ষেত্রটিকে খুবই সম্ভাবনাময় ও উত্তোলনযোগ্য মনে করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এক সভায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মাধ্যমে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সে কারণে পেট্রোবাংলার ওই কোম্পানিটিই হয়তো পরবর্তী কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে ১৯৬৪ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম লৌহ ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় দফায় অধিকতর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। মজুদ ও গভীরতা বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে মতামত পাওয়া গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর