চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সবচেয়ে নাজুক ও বিপদগ্রস্ত অবস্থায় আছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে শ্রম জনশক্তি সেক্টরে নিয়োজিত সদস্যগণ। দেশে যারা দিন এনে দিন খায়, এমন মানুষজনকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি ও সমস্যা। আর যারা বিদেশের শ্রমক্ষেত্রে নিয়োজিত আছেন বা পরিযায়ী শ্রমিক তারাও পড়েছেন নানা ধরনের বিপদে।
করোনাকালের লকডাউন বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় বিদেশের শ্রম বাজারে নিয়োজিতগণ নানা সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষত, যারা নিজ দেশে এসেছিলেন, তারা বিমান সংযোগের সমস্যার জন্য আটকা পড়েছেন। এদিকে অনেকের ভিসার মেয়াদ বা ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফিরতি টিকেট পাচ্ছেন না। ফলে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও অসন্তোষ, যা কারণে বাংলাদেশেও হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে নিপতিত হয়েছেন।
প্রবাসী শ্রমিকদের এই সমস্যার সমাধানে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ভিসার মেয়াদ ও ছুটি বৃদ্ধির জন্যেও চেষ্টা চলছে। বিমান সংস্থাগুলোও যথাসাধ্য কাজ করছে। তথাপি কমেনি অনিশ্চয়তা ও বিক্ষোভ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নামকরণের দিক থেকে আমরা মুখে মুখে সেরা আর কার্যক্ষেত্রে চরম উদাসীন। যার নাম রেখেছি 'সোনালী আঁশ', সেই পাট বিপন্নতায় জবুথবু হলেও আমরা কুণ্ঠিত হই না। প্রবাসী শ্রমিকদের মুখভরা নাম দিয়েছি 'রেমিট্যান্স যোদ্ধা' আর তাদের প্রতি বাস্তবক্ষেত্রে দেখাই সীমাহীন অমনোযোগ। অথচ এইসব ক্ষেত্র আমাদের জাতীয় জীবনে ও অর্থনৈতিক সেক্টরে পালন করে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অভিবাসনের ঘটনা যথেষ্ট পুরনো হলেও শ্রমশক্তির বিদেশ গমন বিগত সত্তর দশকের মধ্যভাগের ঘটনা। তখন মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয় এবং বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ কর্মে নিযুক্ত হয়ে সেখানকার দেশগুলোতে গমন করেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিদেশে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশ শ্রমশক্তি রফতানি করে রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি।
এই শ্রমশক্তি কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য উপার্জন করলেও সীমাহীন সমস্যা ও অসুবিধার সম্মুখীন হন। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে উপযুক্ত প্রতিকার পান না। দালাল বা মালিক পক্ষের দ্বারা নিগৃহীত হলে বিচার পান না। বিশেষ করে নারী শ্রমশক্তি শারীরিক, মানসিক ও যৌন হেনস্তার শিকার হলেও যথাসময়ে যথোপযুক্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পান না।
অনেক সময় বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো শ্রমজনশক্তির সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। কাগজপত্র ঠিক করা ও অন্যান্য কাজে তাদেরকে ভোগ করতে হয় অবহেলা, অসহযোগিতা ও দীর্ঘসূত্রিতা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রবাসী শ্রমিকরা যেসব সমস্যায় পড়েছেন, তার দ্রুত সমাধান করা দরকার। তাদের ক্ষেত্রে আরো যেসব সমস্যা ও অসুবিধা বিরাজমান রয়েছে, সেগুলোও একে একে সমাধানের আওতায় আনা প্রয়োজন। দেশের জন্য অতি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী 'রেমিট্যান্স যোদ্ধাগণ' যেন সম্মানের সঙ্গে ও সমস্যামুক্তভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব।