আধুনিকায়নের যুগে কদর কমেছে টাইপ রাইটারের। আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টাইপ রাইটার নিয়ে বসে থাকতেন টাইপিস্টরা। টাইপ রাইটারের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো আদালতে ও বিভিন্ন সরকারি অফিসে। বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাতেই টাইপ করা যেত। ইংরেজি টাইপ রাইটিং শতাব্দীকাল চললেও বাংলা টাইপ রাইটিং উদ্ভাবনের পর অর্ধ শতাব্দী রাজত্ব করেছে। এখন আইনজীবী চেম্বারে চেম্বারে কম্পিউটার, ল্যাপটপ। পথে ঘাটে হাত বাড়ালেই অধিক সুবিধা সম্বলিত কম্পিউটারের দোকান। তাই বর্তমানে টাইপ রাইটারের কদর কমেছে।
ঢাকার জজ আদালতে ১৯৮৭ সাল থেকে টাইপিস্টের কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদ। ৩৮ বছর ধরে তিনি ঢাকা জজ আদালতের পাশে রেবতী ম্যানশনের প্রবেশ পথে টাইপ রাইটার দিয়ে টাইপ করে চলেছেন।
বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, টাইপ রাইটারের আগেতো খুব কদর ছিল । সাধারণ মানুষ কিংবা আইনজীবী লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করাতেন। এখন আর সেই জৌলুস নেই। বর্তমানে চারিদেকে কম্পিউটার হওয়ায় টাইপ রাইটারের কদর কমে গেছে। বয়স হয়েছে অন্য কোন কাজ পারি না বলে এখনও টাইপ রাইটার নিয়ে বসে থাকি। কোনও দিন ২/১শ টাকা হয়। কোন কোন দিন হয়ও না।
আজাদ আরও বলেন, ‘আগের সেই কাজ আর নেই। এখন ছোটো খাটো কিছু কাজ করি। তাতে যা পাই তা দিয়েই সংসার চালাই।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ৩৭ জন টাইপিস্টের জন্য নির্ধারিত স্থানে গিয়ে মাত্র দু’জন টাইপিস্টকে দেখা যায়। টাইপ রাইটারের স্থান দখলে নিয়েছে কম্পিউটার। দুজন টাইপিস্টের একজন শেখর পাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, কাজ নেই, সংসার চলে না। কোনরকমে টিকে আছি।
ঢাকার জজ আদালতে বিলুপ্তপ্রায় পেশাদার টাইপিস্ট কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা সুভাষ পাল বলেন, আমি ৪৯ বছর ধরে টাইপিংয়ের কাজ করি। এখন টাইপ রাইটারের কাজ নেই বলে কম্পিউটারে কাজ করি। তবে বিজয় কীবোর্ডে নয়, মুনীর অপটিমা কীবোর্ডে। এ কীবোর্ডের সাথে টাইপ রাইটারের কীবোর্ডের মিল আছে। সরকারি চাকরির আশায় টাইপিং শিখি। কিন্তু চাকরি না পাওয়ায় এতো বছর ধরে টাইপিস্টের কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, এখন নতুন করে কেউ টাইপিং শেখে না। আর তা শেখানোর জন্য কোন প্রতিষ্ঠানও আর নেই। আমরাই শেষ জেনারেশন যারা মারা গেলে টাইপিস্ট পেশাটাও হারিয়ে যাবে।
সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান বলেন, আগে পুরো দেশ জুড়ে আমাদের একটা সমিতি ছিল। এখন আর নেই। আগে ঢাকা কোর্ট কাচারী, দৈনিক বাংলার মোড়, ভূমি অফিস, রাজউক ভবন, প্রেসক্লাবসহ শহরের নানান স্থানে টাইপিস্টরা কাজ করতেন। এখন কাজের অভাবে তারা হয় পেশা বদল করেছেন অথবা বয়সের ভারে মারা গেছেন।
অ্যাডভোকেট জুয়েল আহমেদ বলেন, টাইপিস্টরা বানানের বিষয়ে বেশ দক্ষ হয়। তাদের কাজ দিলে বানান ভুল নিয়ে টেনশন থাকতে হয় না। কম্পিউটারের কাজ প্রুফ না দেখলে অনেক ভুল থেকে যায়। তাই আদালতের ছোট খাটো যত কাজ সবই টাইপ রাইটার দিয়ে করি। আগে তো অনেক টাইপিস্ট দেখা যেত। এখন তাদের আর দেখতেই পাওয়া যায় না। টাইপিস্টরা না থাকলে আদালতের বিভিন্ন ফরম পূরণ ও অন্যান্য কাজ করতে একটু ঝামেলাই হবে।