বাসভর্তি ডাকাতদলের হাতেই খুন হোন রবিউল: পিবিআই

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 05:27:23

কাজ শেষে সাভারের নবীনগর থেকে মিরপুর আসার জন্য বাসে উঠেন হোটেল ব্যবসায়ী লষ্কর রবিউল ইসলাম। সেই দিন রাতে যেই ২০-২২ জনকে যাত্রী মনে করে বাসে উঠেছিলে রবিউল তার আসলে কেউ যাত্রী নয়। তারা সবাই ছিলেন ডাকাত দলের সদস্য। আর সেই বাসে ডাকাতিতে বাঁধা দেওয়ায় তাদের হাতে খুন হন রবিউল ইসলাম। পরে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে দেয় ডাকতরা।

গত ৫ অক্টোবর রাতে ঘটে যায় এই ভয়ংকর ডাকাতির ঘটনায় রবিউল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পিবিআই। এ ঘটনায় ডাকাতদলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গ্রেফতাররা হলেন হলো মো.বসির মোল্লা (৪২), শেখ হাফিজ (৩৫), মো.আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো.আমির হোসেন (২৮), মো.আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো.নঈম (২২), তপন (২৮), নাজমুল (৩০)।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে বসির ডাকাতি করছেন। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু করে। পুরো বাস কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নেয় বসির। এরপর তার দলের চারজন সদস্যকে ডেকে পাঠায়। তারা প্রত্যেকে আরো তিন চারজন করে নিয়ে আসে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অনেক যাত্রী দেখে সাধারণ যাত্রীরা বাসে উঠে। উঠার পর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সুবিধামতো জায়গায় যাত্রীকে সুবিধামতো জায়গায় নামিয়ে দেয়।

গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিনদিনের জন্য ভাড়া করে ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেয়ার পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের অন্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয় বসির। গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে ডাকাতি করে দৌলতদিয়ায় রাতভর অবস্থান করে। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ফেরার পথে লঙ্কর রবিউল ইসলামকে বাসে তুলে তারা।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে উঠার পর তাকে ডাকাতির সময় বাঁধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরে, কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধে। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তার হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করে। বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যায় ডাকাতরা।

তিনি আরো বলেন, বাসায় ফিরতে বিলম্ব হচ্ছিল দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের নাম্বারে তা মা কল করেন। অপর প্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানায়, এই নাম্বারের মালিক খুন হয়েছে। তার মরদেহ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙ্গে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।

৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে রবিউলের পরিবার মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।

এ হত্যায় ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক মো. সালে ইমরান ও তার দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই সালে ইমরান জানান, ১৪ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বসির। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত আরো বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর