পবিত্র সংবিধান এবং দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যেকোন ধরনের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই, বন্ধুত্ব চাই, বৈরীতা চাই না, যুদ্ধ চাই না। কারণ যুদ্ধের যে ভয়াবহ রূপ তা নিজের চোখে দেখা আছে। কাজেই আর সে ধরনের সংঘাতে আমরা জড়িত হতে চাই না। কিন্তু যদি কখনো আক্রান্ত হই, সেটা মোকাবিলা করার মতো শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবে তৈরি থাকতে চাই।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালী লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসে ৮টি ইউনিট/সংস্থার পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পটুয়াখালির লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাস যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে লেবুখালিতে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সেনাবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নানামুখী পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। এদেশের উন্নতি হলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরিবারের উন্নতি হবে। সেকথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
করোনাকালীন সময়ে দেশের মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়ানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানান এবং পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সম্পুর্ণ বঞ্চিতই ছিলাম। কাজেই সেখানেই আমাদের একটা এখন ডিভিশন হলো। সুদূরপ্রাসারী কর্ম পরিকল্পনার আলোকে প্রাকৃতিক শোভাকে নষ্ট না করে পরিবেশবান্ধব সেনানিবাস গঠনের পরিকল্পনার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এই এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনীতিক উন্নয়নেও প্রাণ সঞ্চার করবে। বরিশাল অঞ্চলের মানুষের কাছে নতুন আশা জোগাচ্ছে এবং আপনাদের কাছে তাদের প্রত্যাশাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় এই চেষ্টা করেছি- যখনি সরকার গঠন করেছি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নতি হোক। প্রত্যেকটা সদস্য এবং তাদের পরিবারের জীবনমান উন্নত হোক এবং সারা বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান উন্নত হোক। আমরা সেভাবেই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি।
আপনারা সেনাবাহিনীর ভিতরে মূল চালিকাশক্তি, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ কর্তব্যপরতাণতা দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃংখলা বজায় রেখে আপনাদের স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্টার সাথে পালন করে যাবেন সেটাই আশা করি।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি যে আমাদের দেশ নানা ধরনের দুর্যোগ আসে। একদিকে করোনাভাইরাস, অপরদিকে আম্পান ঘুর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এইসব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেও আপনারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং এই ডিভিশনটা প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেজন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের সময় সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বাংলাদেশ যেন এই মন্দার কবলে না পরে সেদিকে দৃষ্টি রেখে যখনি এটার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে তখনি কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করি।যার ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন এদেশে দারিদ্যের হার ছিল ৪০ ভাগ। তা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করা। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এর মধ্যেই আমরা আমাদের দেশেকে উন্নত করতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। করোনাভাইরাসের কারণে হয়ত সেটা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।
সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত করার জন্য সরকার লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুজিববর্ষে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলবে। ৯৭ ভাগ মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। শতভাগ ২০২১ সালের মধ্যে আমরা করতে পারবো। আর বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর বাড়ি তৈরি করে দেবো।