বঙ্গবন্ধুর সকল সিদ্ধান্ত বেগম মুজিব আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তিনি আমাদের আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতেন আন্দোলন সংগ্রামের পরামর্শ দিতেন। আগরতলা মামলা হওয়ার পর তিনি (বেগম মুজিব) আমাদের বলেছেন তোমরা ঘাবড়িও না, তোমাদের নেতা ঘাবড়াই নাই। তিনি বলেছেন, তিনি (শেখ মুজিব) মুক্ত মানুষের মতো আসবেন। তারপর আন্দোলনের মাথায় যখন বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি প্যারোল মেনে নিয়েছিল। সেই মিটিং হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বসে। কিন্তু একমাত্র বেগম মুজিব এর বিরোধীতা করে বলেছিলেন না এটা হতে পারে না। মুক্ত মানুষ হিসেবে ৩৫ জন সহকর্মী নিয়ে মাথা উঁচু করে বের হতে হবে। সেদিন সেইভাবে বের হয়েছিলেন। বেগম মুজিবের দুটি ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাস অনেক কিছু নির্ভর করে। একটি প্যারোলে বাঁধা দেওয়া, আর একটি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন, অনেকেই অনেক কিছু লিখে দিয়েছিলেন, কিন্তু উনি (বেগম মুজিব) বলেছিলেন কারো কথায় কান দিবা না, তুমি এতোদিন যে বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করেছ, তোমার মন যেটা বলে সেটাই তুমি বলবা। তাতে যা হয় হবে। এই দুটি সিদ্ধান্ত আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর আনিত প্রস্তাব সাধারণের ওপর বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু একথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির ওপর একটি দুঃশাসন চেপে বসেছিল এবং একটি ষড়যন্ত্রের অধ্যায় শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানিরা চিরদিন আমাদের লোকদের নিয়ে খেলেছে বাঙালি জাতিকে পদানত করে রাখার জন্য।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়নে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে, তারা বলছে পাক-ভারত যুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নাই, বক্তব্য নাই, ইত্তেফাকের কোনো লেখা নাই, আওয়ামী লীগ দালাল, দালালি করছে এই অবস্থায় আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলাম এবং তাকে সবকিছু বলার পর ওনি (বঙ্গবন্ধু) অট্টহাসি দিয়ে বললেন যুদ্ধের পর আমি এমন জিনিস দেব তোমরা মজা পাবে, ওরা পালাবে। বঙ্গবন্ধু অনেকক্ষণ তর্কবিতর্ক করে বললেন ঠিক আছে আমার একজন পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ আছে, তাকে দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়াই, ওনি তখন শাহ আজিজ সাহেবকে ফোন করলেন। শাহ আজিজ তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমরা বললাম ইত্তেফাকের কথা, ওনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন আমি জানি না মানিক ভাইয়ের কাছে যা, আমরা মানিক ভাইয়ের কাছে গেলাম ওনি বললেন মজিবর মিয়া যেভাবে চলছেন সেভাবেই চলবে। এভাবে কথার অনেক পর রাজি হলেন। পরদিন দুই লাইন লিখেছিলেন। সেই দিন থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রস্তুতি নিয়ে ধাপে ধাপে এবং সত্যিকার অর্থে যুদ্ধের পরেই তিনি ৬ দফা দিলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন বেগম মুজিব সর্বাত্নকভাবে সব নির্দেশ আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এই দেশে তখনকার দিনে যারা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাদের বাসায় আসতেন বোরখা পরে। উনি আমাদের বলতেন কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করব আমাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে সব রকমের সহায়তা সেদিন বেগম মুজিব আমাদের দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা আমাদের কাছে পৌঁছেছেন। আগরতলা মামলা হওয়ার পর তিনি আমাদের বলেছেন তোমরা ঘাবড়িও না তোমাদের নেতা ঘাবড়াই নাই। তিনি বলেছেন তিনি মুক্ত মানুষের মতো আসবেন।