আজ ১৫ নভেম্বর। উপকূলবাসীর ইতিহাসে একটি বিভীষিকাময় একটি দিন। প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা বরগুনা। এই দিনটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখনও এক দুঃস্বপ্ন। ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সেদিন উপকূলীয় এলাকা দেখেছিলো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল হাজারো মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল আরও সহস্রাধিক। ঘরবাড়ি আর সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়। সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ধকল কাটেনি উপকূলবাসীর। ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতের স্বজনরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের এদিনে ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনা জেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৩৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন আরও ১৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। আর আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন। এ জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ পরিবারের মধ্যে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮৫ টি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৩ একর, গবাদি পশু মারা গেছে ৩০ হাজার ৪৯৯টি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২৩৫, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ৪২০ কিলোমিটার। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্য আরো বেশি।
ঘুর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো আজও ঘুড়ে দাড়াতে পারেনি। এখনো নদী ও সাগর পাড়ের অর্ধ-শতাধিক জেলে পরিবার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। তাদের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। বলছেন অসহযোগিতার কারণে স্বজনহারা এ পরিবারগুলো আজও ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করতে পারেনি। নদীতে মাছ শিকার করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন পার করছেন।
পরিবারের চার সদস্য হারানো জামালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তালতলী উপজেলার খোট্টরচর এলাকায় বসবাস করেন তিনি। মা-বাবা, স্ত্রী ও দাদিকে নিয়ে চর এলাকার থাকতেন। নদীতে পানি বাড়তে থাকায় রাত নয়টার দিকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য রওনা হন। এরপরেই রাত অনুমানিক ১০টার দিকে বিশাল একটি ঢেউ এসে তাদের নৌকা তলিয়ে যায়। এতে বাবা-মা, স্ত্রী ও বৃদ্ধা দাদি প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে সাগরে হারিয়ে যায়। তবে এক ছেলে ও এক মেয়েকে রক্ষা করতে পারেন তিনি। দুইদিন পর তাদের মরদেহ ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সেই ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি জামাল।
এদিকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকার ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী হোসনে আরা ও ফুলবরু বিবি জানান, ১৩ বছরেও একটি ঘর পেলাম না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কিছুই দিচ্ছে না। যাদের ঘর জমি জমা আছে, তাদের ঘর দিচ্ছেন তারা।
তালতলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গৃহহীনদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা কোন মানুষই গৃহহীন থাকবে না।