‘প্রধানমন্ত্রী কথা থুইচে, তায় খুব ভালো মানুষ’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 01:18:17

রংপুর: আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে গেল তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’। রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর-লালমনিরহাটবাসীর স্বপ্নের এই সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহিপুর-কাকিনা পয়েন্টে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের নবনির্মিত এই সেতুর উত্তরপ্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের ব্যবস্থা করা হয়। সেতুর নিচে বিশাল প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে উদ্বোধনী ঘোষণা শুনতে। সেই ভিড়ে উচ্ছ্বসিত এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের।

নাম তার আফসার আলী। বয়স সত্তর পেরিয়েছে। গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ইউনিয়নের হাবু পাঁচমাথা গ্রাম থেকে এসেছেন তিনি। সঙ্গের সঙ্গী করেছেন গ্রামের আরও কয়েকজনকে। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আবেগপ্রবণ হয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠান শেষে নতুন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে আফসার আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সেতু হওয়াতে মোর ভালোয় হইল। আগোত নৌকাত করি নদী পার হওয়া নাগচে। এ্যালা আর সেই কষ্ট থাকিল না। ঘন ঘন বেটির বাড়িত যাওয়া যাইবে। প্রধানমন্ত্রী তার কথা থুইচে। সত্যি শেখ সাইবের বেটি ভালো মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘হামার যাতায়াতের জন্য নতুন সেতুটা উপকারোত নাগবে। আগের মতো সময় নষ্ট হবার নায়। এ্যালা সহজে কালিগঞ্জ-হাতিবান্ধা যাওয়া যাইবে। লালমনিরহাটের মানুষও তাড়াতাড়ি রংপুর বেড়ে যাবার পাইবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সোগোতে উপকার হইবে।’

নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হওয়ায় খুশি আফসার আলী দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি কাছ থেকে দেখতে না পেয়ে। তিনি বলেন, ‘এই সেতুর ভিত্তি দেবার সময় শেখ সাইবের বেটি গঙ্গাচড়াত আসিছিল। সে দিনও মুই এটে আসচুনু। কিন্তুক আইজ সেতুর উদ্বোধন হইল বড় পর্দাত (ভিডিও কনফারেন্সে)। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থাকি কথা কইল। সরাসরি যদি এ্যটে আসিল হয়, মনটাত মোর খুশি নাগিল হয়।’

আফসার আলীর মতো রংপুর ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানান শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনে। তাদের সবাই খুশি দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের এই সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন দেখতে পেয়ে।

এই আয়োজনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মোতাহার হোসেন এমপিসহ রংপুর ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিপুর-কাকিনা পয়েন্টে তিস্তা নদীর ওপর এই সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের জুনে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে এ বছর কাজ শেষ করা হয়। প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৫ মিটার চওড়া। সেতুটির এক প্রান্তে রংপুরের গঙ্গাচড়া মহিপুরঘাট ও অন্যপ্রান্তে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ কাকিনা। এই দুই জেলার মানুষের মাঝে এক নিবিড় সেতুবন্ধন গড়ে তুলতেই মহিপুর-কাকিনার সীমান্তে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগ এখন সফল।

এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের এই সেতুটি চালু হলে এখানকার একমাত্র স্থল বন্দর বুড়িমারীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সড়কটি পরিণত হবে আন্তর্জাতিক মহাসড়কে। রংপুর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর যেতে দূরত্ব কমে আসবে ৩০ কিলোমিটার। সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন রংপুরের উত্তম হাজিরহাট এলাকা হয়ে চলাচল করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর