জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রবীণ নিবাসে থাকাকালীন সময়ে ‘ওরা আমাকে এতো কষ্ট দেয় কেনো’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি অনেক গণমাধ্যম নিউজটির ক্রেডিট না দিয়ে কপি করে অতিরঞ্জিত কিছু তথ্য দিয়ে পুনরায় প্রকাশ করে। এরপর প্রবাসে থাকা তার সন্তানরাও এ বিষয়ে জানতে পারেন।
নিউজটি প্রকাশ হওয়ার পর তার সন্তানরা যে যেখানে আছেন সেখানে সামাজিকভাবে হেয় হতে থাকেন। তাদের অবস্থান ও পিতার ইচ্ছা পরিষ্কার করতে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ড. এম আব্দুল আউয়ালের বড় ছেলে আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে এই প্রতিবেদক ও অধ্যাপক আউয়ালের পরিবারের আরও সদস্যসহ বসেন। সেখানে সবকিছু পরিষ্কার করা হয়। এরপর ২ আগস্ট প্রকাশিত হয় ‘সন্তানেরা যেখানে চায় সেখানেই থাকতে চাই’। কিন্তু কিছু মানুষ পরের সংশোধনীটা না দেখে পূর্বের প্রতিবেদনটিই কপি করে ফেসবুক, টুইটার ও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করছেন, যা অধ্যাপক আউয়াল ও তার সন্তানদের আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন করছে এবং তা সেই ২০১৫ থেকে শুরু করে ২০২০ সালে এসেও!!!
বিষয়টি পরিষ্কার করতে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বসে আবারও পরিষ্কার করেন অধ্যাপক আউয়াল। তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারাও আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে। কাজেই প্রবীণ নিবাসে থাকা না থাকা আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। এখানে আমার সন্তানদের মতামতের প্রয়োজন ছিল না। আমার বিষয়ে আমিই সবসময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সম্পত্তি ও টাকা পয়সায় সন্তানদের কখনো কোনো হাত ছিল না কারণ এসবে সবসময় আমার কর্তৃত্ব ও দখলে ছিল। আমার দুর্ভাগ্যেই আমি সব হারিয়েছি। তাই ভবিষ্যতে যেন কেউ এনিয়ে কোনো কিছু না করে, কেউ যেন ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে কোনো বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ না করে। আর যদি পুনরায় কেউ তা করতে চায় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধ্যাপক আউয়াল আরও বলেন, যেহেতু প্রথম নিউজটির সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছে সেই ২০১৫ সালে, তাই পূর্বের নিউজটি যে কেউ চাইলেই প্রকাশ করতে পারে না, বা ফেসবুকে দিতে পারে না। যারা কপি করেছে বা যারা পোস্ট দিচ্ছে তারা একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এটা করে আসছে । তাদের সত্য ঘটনায় আগ্রহ নেই, মানুষকে হেয় এবং অপদস্থ করাই তাদের উদ্দেশ্য। আমি একজন শিক্ষক। আমার এবং আমার ছেলে-মেয়েদের সামাজিক অবস্থা ক্ষুণ্ন করছে, করা হচ্ছে। তাই আর যেন কেউ এটা না দেয় তাই কাম্য। আমার এবং আমার সন্তানদের নিয়ে লোকজনের বক্তব্য, বিশেষ করে ফেসবুকে অত্যন্ত জঘন্য ভাবে প্রকাশ পায়। আমার সন্তানদের কোনো রকম দোষ না থাকলেও তারা কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। তারা সব কিছুই ভাগ্যের পরিহাস বলে মেনে নিয়েছে, মহান আল্লাহের কাছে ছেড়ে দিয়েছে। আমি মনে করি আমি তাদেরকে মানুষের মত মানুষ করতে পেরেছি। তারা তাদের মাকে আমৃত্যু সেবা দিয়ে গেছে। আমার জন্যও তাই করবে।
প্রসঙ্গত তিনি উল্লেখ করেন যে এ ব্যপারে তিনি সাধারণ ডায়েরি করেছেন, অনেকের কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমনকি সিআইডির সাহায্য নিচ্ছেন এই অপপ্রচার বন্ধের জন্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি ভবিষ্যতে কেউ দিতে চায় বা দেয় অথবা শেয়ার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম প্রতিবেদনের প্রতিবেদক হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে- তখন কিছুটা আমার ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। এরজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে যেহেতু সংশোধনী একবার দেওয়া হয়েছিল তাই পাঠকদের উচিত সংশোধনীটা জানা। যারা না জেনে পূর্বের নিউজটি প্রকাশ করছে তাদের উচিত সত্যটা জানা। প্রফেসর আউয়াল আসলে স্বেচ্ছায় প্রবীণ নিবাসে ছিলেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি একাকিত্ব জীবন যাপন বেছে নেন, থাকতে চান স্বাধীনভাবে। সেই ইচ্ছা শক্তিতেই চলে আসেন প্রবীণ নিবাসে। আত্মীয়স্বজন এবং প্রবীণ নিবাস থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও তিনি সেখান থেকে চলে যেতে ওই সময়ে রাজি ছিলেন না। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে তিনি তার বর্তমান ঠিকানায় বসবাস করে আসছেন । তার বসবাসের খরচপত্র তার সন্তানরা বহন করেন। সন্তান ও ৫ নাতনীসহ তার বিশাল পরিবার। সবাই যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত।