উচু ভবন থেকে বিদ্যুতের লাইনের উপর ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, এতে অনেক সময় বিদ্যুতের বিভ্রাট হচ্ছে। গ্রাহকরা সচেতন হলে আরও বেশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আমীর আলী।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত শতভাগ বিদ্যুতায়ন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঢাকা শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড খুবই চ্যালেঞ্জ। রাস্তার পাশে ৬ থেকে ৮ শতাংশের বেশি জায়গা নেই। প্রত্যেক সংস্থা আন্ডারগ্রাউন্ড যাচ্ছে, এখানে জায়গা পাওয়াটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।
মার্কেট ও বাণিজ্যিক ভবনে সিঙ্গেল পয়েন্ট মিটারিং প্রশ্নে ডেসকো এমডি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি এটি সমস্যা হচ্ছে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি, প্রি-পেমেন্ট মিটারের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা মিটার দেওয়া হবো। পরীক্ষামুলকভাবে দু’একটি জায়গাও দেওয়া হচ্ছে। তবে একটি মেইন মিটার থাকবে। তবে মার্কেটের ক্ষেত্রে এটি করা খুবই কঠিন। সেখানে ওয়ারিং সিস্টেমের কোনো নকশা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সকল ইউটিলিটির ইউনিফাইড বিলিং সিস্টেম করার কাজ করছে বিইআরসি। তারা একটি ফরম্যাট রেডি করছে। খুবই শিগগিরই হয়তো এটি চালু হবে। টঙ্গী এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া কাজ চলছে, জুনের মধ্যে হবে আশা করছি, ডুয়েল সোর্সের সুযোগ রাখা হয়েছে। তিন-চার মাস হলো আন্ডারগ্রাউন্ড করার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছি। এখন রাস্তা কাটার অনুমতি পাওয়া যায় নি।
তিনি বলেন, বিইআরসিকে অনুরোধ করেছি মাল্ট্রি ইয়ার ট্যারিফ দেওয়ার জন্য। যাতে ফোরকাস্ট থাকবে, গ্রাহকরা সেভাবে প্লানিং করতে পারবে। ইউটিলির প্লানিংয়েও সুবিধা হবে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, লোকজন প্রথমে একটি লোড অনুমোদন নেন। পরে নানা যন্ত্রপাতি যুক্ত করেন অনেক লোড বেড়ে যায়। এ কারনে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হচ্ছে। কোয়ালিটির বিদ্যুতের জন্য বিতরণ কোম্পানির পাশাপাশি গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। বিতরণ কোম্পানির একার পক্ষে সম্ভব না। আমাদের চোখ খুলে যাচ্ছে ইউটিলিটি কোম্পানিকে যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে, তেমনি রেগুলেটরি বডিকেও আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার হচ্ছে, আগুন লাগলেই বলা হচ্ছে শর্ট সার্কিট। আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা খুবই অবহেলিত। কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভবন করা হচ্ছে সে তুলনায় বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
এফবিসি্আই’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায়, দেশের প্রত্যেক সেক্টরের উন্নয়ন বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে গ্রাহকরা আমরা ভালো নেই, এই জিনিসটা মাথায় নিতে হবে। বিদ্যুৎ বিল কতো নেন এটা আমরা জানি না। সিঙ্গেল পয়েন্ট মিটারিং করার কারণে একটি চার ফ্লাটের মালিক কতো টাকা নেন এটি আমরা জানি না। সমস্ত দোকান কিংবা ফ্লাট থেকে ঘুরে ঘুরে বিল তুলতে হয়। গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরণের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোনো মার্কেটে ১৬ টাকা ইউনিট, কোথাও ১৪ কোথাও ১২ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
এনার্জি এন্ড পাওয়ারের কনসালটেন্ট এডিটর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক সুফী বলেন নিরবিচ্ছিন্ন এবং কোয়ালিটি বিদ্যুৎ ভিন্ন বিষয়। আন্ডার গ্রাউন্ডের কোনো ডিজিটার ম্যাপিং নেই, ইন্ট্রিগেট্রেড জিআইস ম্যাপিং ডিজাইন জরুরি, না হয় তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, অন্যান্য সংস্থার যৌথভাবে ম্যাপিং করা দরকার।
বিদ্যুতের আদর্শ রেট থাকা উচিত, সুযোগ থাকলে দাম কমাতেও হবে। এই মুহূর্তে একই এলাকায় একাধিক বিতরণ কোম্পানি থাকার মতো পরিস্থিতি হয় নি। ভবিষ্যতে যখন পরিস্থিতি হবে দেখা ভাবা যেতে পারে।