অরক্ষিত খন্দকার বাড়ির গণকবর, স্বীকৃতি মেলেনি শহীদদের

, জাতীয়

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-28 21:08:07

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কৃষ্ণপুর ধনঞ্জয় গ্রামের খন্দকার বাড়ির গণকবরটি বর্তমানে অরক্ষিত ও জনাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট সেখানেই ৩৭ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী ঘাতকরা।

সম্প্রতি গণকবরটি সরেজমিনে দেখতে গেলে এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও ৩৭ জন শহীদের গণকবরটি এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি। শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসান মাহমুদের সহযোগিতায় ২০০১ সালের ১৬ জুন একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করেন আমড়াতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মো. আবদুল করিম। প্রতি বছর ডিসেম্বরে গণকবরের খোঁজ নেন অনেকে কিন্তু পরক্ষণে আবারও ভুলে যান।

গণকবরটি সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. সফিউল আলম বাবুল বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে ওই গণকবরটি সংরক্ষণের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। তবে জেলার ১১০টি গণকবর সংরক্ষণের বরাদ্দ এলেও এটির বরাদ্দ আসেনি।’

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে খবর আসে গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী আসছে। এ খবরে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রামের খন্দকার বাড়ির বাসিন্দা ও কৃষক সরাফত আলী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এমনকি আশ-পাশের বাড়ি ও গ্রামের লোকজনও সেখানে আশ্রয় নেন। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে সরাফত আলী দুপুরের খাবারের জন্য মাঠ থকে ৭ জন কৃষি শ্রমিককে নিয়ে বাড়িতে আসেন। তবে পুকুরে হাত-মুখ ধুতে যাওয়ার সময় হানা দেয় পাক বাহিনী। এ সময় ব্রাশ ফায়ারে শিশুসহ নিহত হন ৩৭ জন। ওই শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয় খন্দকার বাড়ির আঙিনা।

আরও জানা গেছে, পাশের গ্রামে স্বামীর বাড়িতে থাকায় ওইদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরাফত আলীর মেঝ মেয়ে মনুজা খাতুন। ওই হত্যাযজ্ঞের পর এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেদিন বিকেলে লোকমুখে ঘটনা জানতে পেরে ছুটে যান মনুজা খাতুন। গিয়ে দেখেন মা-বাবা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য লাশ বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে।

ওই হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন খন্দকার বাড়ির বাসিন্দা জহিরুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ায় এই বাড়ির উপর পাকিস্তানীদের নজর পড়ে। আমার বয়স তখন ১৫-১৬ বছর। আমরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যাই। বাড়ির ৩৭ জনকে হত্যার কথা শুনে ওইদিন বিকেলে আবার ফিরে এসে অসংখ্য লাশ পড়ে থাকতে দেখি। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় দুইটি গর্ত করা হয়। যার একটিতে নারী এবং অপরটিতে পুরুষদের লাশ রেখে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এই ৩৭ জন শহীদের ভাগ্যে শেষ গোসল বা জানাজা কিছুই জোটেনি।

শহীদ কৃষক সরাফত আলীর নাতনী (মনুজা খাতুনের বড় মেয়ে) হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার মা পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একাকি জীবনযাপন করে গেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও ওই ৩৭ জন শহীদের গণকবরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। গণকবরের জায়গা দখল করে অনেকে ঘর তুলেছেন। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় এখনও শহীদদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর