হাসপাতালের কোয়াটারে চেম্বার বানিয়ে সেখানে রোগী দেখার পাশাপাশি সরকারি ওষুধ ব্যবহার করে সেখানে ছোট খাটো অস্ত্রপচার করা হচ্ছে। তাতে রোগী প্রতি হাজার হাজার টাকা আদায় করছেন ভূঞাপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: মহী উদ্দিন আহমেদ।
সরেজমিনে ভূঞাপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের আবাসিক ভবন নামে পরিচিত রজনীগন্ধা কোয়াটারের দ্বিতীয় তলার ১২ নং বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পুরো ইউনিটে জুড়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) মহী উদ্দিন আহমেদ বসবাস করছেন। এরমধ্যে এক রুমে রোগীদের বসার স্থান ও এক রুমে রোগী দেখার চেম্বার করেছেন তিনি। আর সেই চেম্বারেই তিনি অসুস্থ রোগীদের ছোট খাটো অস্ত্রপ্রচার করছেন। অস্ত্রপচারের জন্য ব্যবহৃত সকল ধরনের ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূঞাপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কর্মকর্তা (টিএইচও) মহী উদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে যোগদানের পর থেকেই রজনীগন্ধা কোয়াটারের দ্বিতীয় তলায় ১২ নং বাসায় বসবাস করছেন। কিন্তু তিনি সরকারি কোয়াটার ব্যবহার করলেও প্রতিমাসে বেতনের সাথে সরকার থেকে নিয়মিত বাসা ভাড়া বাবদ টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
এছাড়া তিনি সেখানে চেম্বার বানিয়ে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে সেখানে রোগী দেখেন। এতে গুরুতর রোগীদের ছোট খাটো অপারেশন করেন ওই চেম্বারেই। অস্ত্রপচারের পর সেই রোগীদের ভর্তি করান হাসপাতালে। এরপর হাসপাতালের ভর্তি ওয়ার্ডেও অপারেশন রোগীদের ড্রেসিং করিয়ে নেন ৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়; অপারেশন করাতে সকল ধরনের ওষুধপত্র তিনি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করেন।
এছাড়া রোগীদের বাইরে থেকে কোন ওষুধপত্র কিনতে হবে মর্মে রোগীদের সাথে টাকার চুক্তি করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি সরকারি কোয়াটারে রোগী দেখা ও অপারেশন করে যাচ্ছেন। অপারেশনের সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মরতদের ডেকে নেন তার চেম্বারে। পশ্চিম ভূঞাপুরের দুলাল নামের এক রোগীর পিঠের অপারেশন করান টিএইচও ডা: মহী উদ্দিনের চেম্বার থেকে। এতে শুধু অপারেশন বাবদ তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
উপজেলার খানুরবাড়ি গ্রামের কৃষ্ণা রানীর হাতে টিউমার অপারেশনের জন্য তাকে দিতে হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। এরকম প্রতিনিয়ত তিনি চেম্বারেই অপারেশন করে লাখ লাখ টাকা কমিয়ে নিচ্ছেন। তাকে রোগী দিয়ে সহযোগিতা করে তারই গাড়ির চালক শাহজালাল।
কৃষ্ণা রানীর স্বামী গনেশ শীল বলেন, তার স্ত্রীর হাতে তিনটি ফোঁড়া হয়ে ফেটে গিয়েছিল। পরে হাসপাতালের টিএইচওকে দেখালে তিনি অপারেশনের কথা বলেন। তার সরকারি কোয়াটারের চেম্বারে অপারেশন করা হয়। অপারেশন বাবদ ওষুধসহ তার সাথে ১৫ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছিল। অপারেশনের পর হাসপাতালে প্রায় দেড়মাস ভর্তি ছিলাম। প্রতিদিন তিনি হাসপাতালে এসে ড্রেসিং করাতেন। এতে তাকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিতে হত।
ভূঞাপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুজ্জামান বলেন, টিএইচও হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই তিনি চিকিৎসকদের কোয়াটার রজনীগন্ধার ১২ নং বাসাতেই থাকেন। বর্তমানে অলনাইনে বেতন জমা দেয়ায় তিনি বাসা ভাড়া উত্তোলন করেন কিনা সেটা জানা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগদানের প্রথম দিকে তিনি (টিএইচও) বাইরের ক্লিনিকে রোগী দেখতেন। কিন্তু পরবর্তিতে কোয়াটারেই চেম্বার বানিয়ে সেখানে রোগী দেখার পাশাপাশি সেখানে অপারেশন করছেন নিয়মিত। এতে রোগী প্রতি অপারেশনের টাকা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মহী উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে টিএইচওর জন্য আলাদা কোন কোয়াটার নেই। চিকিৎসকদের কোয়াটারের রজনীগন্ধা ভবনের ১২ নং বাসায় বসে গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বাইরে ক্লিনিকে অপারেশন করলে টাকা বেশি লাগবে রোগীদের। হাসপাতালের ওডিতেও অপারেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। কোয়াটারের এই চেম্বারেই লোকাল (অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ) ব্যবহার করে অপারেশন করি। অপারেশনের পর রোগীর স্বজনরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী টাকা পয়সা দেন। এতে কোনো রোগীকে চাপ দেওয়া হয় না। হাসপাতালের স্টাফদের আত্মীয় স্বজনদের অনেক রোগী আসে তাদের বিনামূল্যে অপারেশন করে দেই।’