সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত জায়গাগুলো দখল করে নেওয়া হয়েছে, যে জায়গাগুলো মানুষ দখল করেছে, তা উদ্ধার করতে হবে। এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভাষানটেক, ইব্রাহিমপুর ও তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শন করেন। বেলা ১১টায় মেয়র ভাষানটেক বাজার থেকে পকেট গেট পর্যন্ত সরু সড়কটি পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেক মোল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সড়কটি পরিদর্শন করার পরে মেয়র বলেন, ভাষানটেকের মূল রাস্তাটি ১২০ ফুট চওড়া। এই এলাকার মানুষ জানে আগে কি অবস্থা ছিল। এখানে চলতে গেলে আগে অনেক ট্রাফিক জ্যাম হত। আগের চিত্র এবং বর্তমান চিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই ১২০ ফুট চওড়া রাস্তা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে রাস্তা ২০ ফিট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা চাই, যে জায়গাগুলো দখল করে নেওয়া হয়েছে, যে জায়গাগুলো উদ্ধার করতে হবে। এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
মেয়র আরও বলেন, আমি মনে করি যতটুকু জায়গাতে রাজউকের অনুমোদন আছে, ততটুকুতেই ভবন বানাতে হবে। দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। আমি রাজউকের সাথে কথা বলেছি। তারা বাড়ির সীমানা মার্কিং করবে। দখলকৃত জায়গা আমরা ভেঙে দেবো। এখানকার স্থানীয় জনগণসহ জনপ্রতিনিধিরা সকলেই চাচ্ছেন এই সড়কটি প্রশস্ত করতে এবং আমরা তা করব। পরে মেয়র ভাষানটেক বস্তি পরিদর্শন করেন।
বেলা ১২টায় আতিকুল ইসলাম ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপুর এলাকা পরিদর্শন করেন। ইব্রাহিমপুরে প্রায় ৪ কি.মি রাস্তার উভয় পাশে প্রায় ৩৫০টি বাড়ি ও দোকানের সামনের দেয়াল ভেঙে প্রশস্ত করা হয়। বাড়ি ও দোকানমালিকরা স্ব-উদ্যোগে এটি করেন। এর ফলে গলির ভিতরের এই রাস্তা দিয়ে সহজে যান চলাচল করতে পারবে। সড়কগুলো হচ্ছে ইব্রাহিমপুর মুন্সিবাড়ি সড়ক থেকে মধ্যপাড়া জামে মসজিদ হয়ে ইব্রাহিমপুর প্রধান সড়ক পর্যন্ত এবং ফ্যাশন টেইলার্সের গলি থেকে বিআরবি গার্মেন্টস পর্যন্ত। গলির ভিতরে এই সড়কগুলো ইতিপূর্বে ৯ ফুট থেকে ১২ ফুট প্রশস্ত ছিল। বাড়ি ও দোকানের দেয়াল ভাঙার পরে বর্তমানে তা ১৬ ফুট থেকে ২০ ফুট প্রশস্ত হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মতিয়ুর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় এ কাজে অংশ নেয়। মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব এলাকার বাড়ি ও দোকান মালিকদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
মেয়র বলেন, এই এলাকার রোডগুলো আগে ১২ ফুটের বেশি ছিল না। এই এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আপামর জনসাধারণ মিলে পরিকল্পনা করে রাস্তাগুলোকে ১৬ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করেছে। এজন্য আমি এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা নিজেরাই স্ব উদ্যোগে আমাদের সাথে আলাপ করে এই কাজটি করেছে। নিজের স্বার্থ চিন্তা না করে জনগণের স্বার্থে, সকলের স্বার্থে এই রাস্তাগুলো বড় করা হয়েছে। এর ফলে এই এলাকার জনগণই উপকৃত হবেন।
বেলা আড়াইটায় মেয়র আতিকুল ইসলাম তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই রোডটি প্রায় চল্লিশ বছর পরে মেয়র আনিসুল হক দখলমুক্ত করেন। কিন্তু মাঝেমাঝেই এখানে ট্রাক-কাভার্ড পার্কিং করে। আমরা পুলিশের সহায়তায় দখলমুক্ত করি, কিছুদিন পরে আবার দখল হয়ে যায়। এর একটি স্থায়ী সমাধান আমাদেরকে করতে হবে। এখানে প্রায় ৫ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আসা-যাওয়া করে। ২ হাজার ট্রাক রাতে এখানে থাকে। মাঝে মাঝে ভেতরে থাকে জায়গা না হলে বাইরে চলে আসে। গত কয়েক বছরে ট্রাক আরও বেড়েছে। আমরা এখন চিন্তা করছি এখানে রেলওয়ের জায়গা আছে। আমরা রেলওয়েকে চিঠি লিখবো এখানকার ২১ বিঘা জমি ডিএনসিসিকে দেওয়ার জন্য। এটি পেলে আন্ডারগ্রাউন্ডে এবং ওপরে মাল্টিপার্কিংয়ের ব্যবস্থা করব।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমি রাজউককে বলেছি, ঢাকা শহরে যে ট্রাক আসে এর জন্য কেন আমরা পরিকল্পনা নিইনি। থানার সামনে যেভাবে গাড়ি ডাম্পিং করা হয় সেজন্য কেন আমাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এ সকল পরিকল্পনা আমাদেরকে করতে হবে। ঢাকাকে উন্নত শহরে পরিণত করতে হলে এগুলোর সমাধান করতে হবে।
পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।