রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে আব্দুল হালিম (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ব্যক্তি হারাগাছ পৌরসভা এলাকার পাইকার বাজারের মৃত ছমস উদ্দিনের ছেলে। তিনি মালা বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার হারাগাছ থানার সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের তিস্তার চর মিলনবাজারে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে হারাগাছ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আব্দুল হালিম দীর্ঘদিন ধরে তামাক, জর্দা, গুল ও বিড়ির ব্যবসা করে আসছেন। এর আগে তিনি ভরসা গ্রুপে চাকরি করেছেন বলে জানা গেছে।
নিহতের পরিবার জানায়, হারাগাছ থানার সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের তিস্তার চর মিলনবাজার এলাকার মজিবরের কাছে তামাক বিক্রির ১৩ লাখ টাকা পেতেন হারাগাছের দর্জিপাড়া গ্রামের চান মিয়া। প্রায় দেড়মাস আগে এ নিয়ে একবার বৈঠকও হয়। সেখানে ৫ জানুয়ারি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন মজিবর। সে অনুযায়ী একটি লিখিত অঙ্গীকারনামাও তৈরি করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেই টাকা আদায়ের জন্য চান মিয়া, আব্দুল হালিম সরকারসহ স্থানীয় আরও দু-তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চর টাঙরীর বাজারে গেলে প্রতিপক্ষ মজিবর ও তার সমর্থক ফজলু এলফাত, রতন, ফজু এবং আরও ২০-২৫ জন যুবক তাদেরকে ধরে নিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়িতে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক চলাকালে দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সরকারকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় হালিমকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এদিকে স্থানীয় একজন ব্যক্তির তামাক ব্যবসার পাওনা টাকার বিরোধ মেটাতে ডাকা সালিশ বৈঠকে গিয়ে আব্দুল হালিম হত্যার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার বড় ছেলে মোহন মিয়া।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছে সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসেছিল। বিরোধ মেটাতে সেখানে তার বাবাও ছিলেন। বৈঠকে তার বাবার তোলা একটি প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে হট্টগোল শুরু হলে বিক্ষুব্ধরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
মোহন মিয়া বলেন, আমি অন্যের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওখানকার গ্রামবাসীকে অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু হট্টগোল শুরু হলে ফজু ও ফজলু নামে দুই জনসহ অনেকে আমার বাবাকে টার্গেট করে মারধর করতে থাকে। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ফজু ও ফজলু দীর্ঘদিন থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। তারা হারাগাছ এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বলেও জানান নিহতের ছেলে মোহন মিয়া।
রাতে লালমনিরহাট সদর ও হারাগাছ মেট্রোপলিটন থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে হারাগাছ মেট্রোপলিটন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাস্থল লালমনিরহাট হওয়ায় এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা হবে। তামাক ব্যবসার পাওনা টাকার বিরোধ থেকে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলেও তিনি জানান।