চাকরি ভিসায় ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা ও মানবপাচারকারী চক্রের ৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আসামিরা চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশেষ তাদেরকে শ্রীলঙ্কার জঙ্গলে ফেলে দিতো।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. হাবিবুর রহমান (৫১), মামুনুর রশিদ (মামুন) (৪১), মো. জামাল হোসেন (৪০) ও নাহিদুল ইসলাম পলাশ (৪৫)। এসময়ে তাদের কাছ থেকে ২৮টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যাংক ও এজেন্সির ১৯টি সিলমোহর ও কম্বোডিয়ার ১০টি জাল ভিসা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সিআইডি সদর দফতর সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিদেশে গমনেচ্ছুদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে (মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মিশর, মালদ্বীপ কিংবা কম্বোডিয়ার মতো দেশে পাঠানোর কথা বলে মানুষ সংগ্রহ করতো। পরে অনুমোদনহীন এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়াই প্রথমে ভিজিট ভিসায় ল্যান্ড চেকপোস্ট ভারতে পাঠাতো।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ভারতে নেয়া লোকজনদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ভুয়া ভিসা দিয়ে পরিবারের লোকজনদের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা সংগ্রহ করতো। যারা টাকা দিতে না পারতো তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করে টাকা আদায় শেষে জঙ্গলে ছেড়ে দিতো। এই সংঘবদ্ধ চক্রে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের দালাল চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়াও এই চক্রটি ইউরোপে নেয়ার কথা বলে জাল ভিসা সরবরাহ করতো এবং ঘন ঘন অফিস ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতো।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি, চক্রটি ছয় থেকে সাত বছর ধরে এ কাজ করছে। আরও তথ্য পেয়েছি, তারা এই সময়ে একশোর মতো লোক পাচার করেছে। আমরা এখনও পর্যন্ত সেসব ভিকটিমদের সন্ধান পাইনি।
ওমর ফারুক বলেন, প্রথমে ভিকটিমদের বিআরটিসি বাসে করে বেনাপোল নেয়া হয়। সেখান থেকে তাদেরকে বাসে করে নেয়া হয় কলকাতায়। পরে ট্রেনে করে হায়দারাবাদে নেয়া হয়। এরপর টলারে করে নেয়া হয় শ্রীলঙ্কায়। সেখানে জঙ্গলে ফেলে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হতো। পরে ওই ভিকটিমেরা সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীলঙ্কার স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। দেশ থেকে ভুক্তভোগীদের পরিবার থেকে টাকা পাঠালে সেই টাকায় দেশে ফিরে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হয়।
এই চক্রের সঙ্গে কোনও রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত ছিল কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ ওমর ফারুক বলেন, তাদের কোনও রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সই নেই। এসব বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।
ভিকটিমদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহসান হাবীব জানান, মাল্টা পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ টাকা নেয়। এরপর ভারতের হায়দারাবাদে নিয়ে নির্যাতন করে আরও ৪ লাখ টাকা আদায় করে জঙ্গলে ফেলে দেয়। পরে তিনি স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জাকির হোসেন এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মিডিয়া) জিসানুল হক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রতন কৃষ্ণ নাথ উপস্থিত ছিলেন।