‘বিচারহীনতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবে দিহানদের সৃষ্টি হচ্ছে’

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 11:12:49

আমাদের সমাজে ৯৯ শতাংশ ধর্ষকই মনে করে, অপরাধ করে সে পার পেয়ে যাবে। একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর পরই সবাই ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করে। কিন্তু ফাঁসিই একমাত্র সমাধান নয়। প্রত্যেক অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আনুশকা হত্যায় পুলিশের ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট যেন কোনভাবেই প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত না হয় এবং যথাময় সম্পন্ন হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবে সমাজে ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের সমাজে অপরাধীকে বাঁচানোর একটা চেষ্টা চলে, যারা প্রশ্ন তুলে আনুশকা সেখানে কেন গিয়েছিলো তাদের বলতে চাই আনুশকা কি সেখানে ইচ্ছা করে মরতে গিয়েছিলো ?

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে ‘দিহানদের অবক্ষয়ের জন্য অভিভাবকদের দায়’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

আনুশকার হত্যার ন্যায়বিচার পাবার শঙ্কা প্রকাশ করে শাহীন আনাম দিহানের পক্ষ নিয়ে তার মায়ের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। আনুশকাকে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ তথাকথিত ধর্মান্ধরা যেভাবে আনুশকাকে নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলছে এটা ন্যায় বিচারকে ব্যাহত করবে। নিপীড়ন বিরোধী সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার মাধ্যমে আমাদেরকে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক পিতা-মাতাকে খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কোন বন্ধুদের সাথে মিশছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আজকাল কিছু কিশোর-কিশোরীরা আধুনিকতার নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবকদের উদাসীনতা, বাবা-মায়ের অতি আদর, নৈতিক শিক্ষার অভাব, শিথিল সামাজিক বন্ধন, মাদকের সহজলভ্যতা, তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার, সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ইত্যাদি কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি করছে। উঠতি বয়সের কিশোরদের কেউ কেউ তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইভটিজিং, গ্যাং রেপ, সংঘবদ্ধ হয়ে মারামারি, গ্রুপ করে বেআইনিভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানো, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি থেকে শুরু করে খুনাখুনির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোররা। ফলে বর্তমান সমাজ কাঠামোতে মূল্যবোধের অবক্ষয় দিনে দিনে বেড়েই চলছে। ফলে তৈরি হয়েছে ঐশী, নয়নবন্ড, তুফান সরকার, দিহানরা।

কিশোর অপরাধ রোধে জনাব কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। সুপরিশগুলো হলো- ১. সন্তানরা কার সাথে মিশছে, কি করছে, কারা তাদের বন্ধু বান্ধব, ঠিকমত লেখাপড়া করছে কিনা, নিয়মিত ক্লাশে যায় কিনা এসব বিষয়ে অভিভাবকদের খোঁজ খবর রাখতে হবে ২. সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেষ্ট থাকতে হবে ৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হতাশায় ভুগছে এরকম শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিপীড়ন বিরোধী সেল বাধ্যতামূলক করা উচিত। যে সেল সংশ্লিষ্ট দফতরে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে ৪. টিকটক, লাইকি, তথাকথিত মিউজিক ভিডিও ও মডেল বানানোর নামে যারা কিশোর-কিশোরীদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে ৫. অপরাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে কিশোর-কিশোরীরা মিটিং-মিছিলে যাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ৬. কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছা ও রাজনৈতিক ঐক্যমত গড়ে তোলার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে ৭. খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৮. মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে নজর দিতে হবে ৯. পারিবারিক কলহের কারণে সন্তানের প্রতি যাতে অবহেলা তৈরি না হয় সেদিকে মা বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে ১০. আধুনিকতার নামে যাতে কিশোর-কিশোররা মাদক ও অনৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত না হতে পারে সে বিষয়ে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিযোগিতায় ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজকে পরাজিত করে শরীয়তপুরের মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজ বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক ইয়াসমিন রিমু, ড. শাহ আলম চৌধুরী, সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা ও সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর