বাম্পার ফলনেও বিপাকে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা

, জাতীয়

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-08-25 21:49:37

অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও মন্দা বাজারে বিপাকে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা। আগাম বাজারদর মন্দা থাকায় পেঁয়াজ চাষাবাদের খরচের টাকা তুলতে হিমশিম অবস্থায় রয়েছে জেলার কয়েক হাজার কৃষক। গেলো কয়েক মৌসুম ভালো বাজারদর পেলেও চলতি মৌসুমে বিপাকে রয়েছে পেঁয়াজ চাষিরা।

জেলার একাদিক পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জমি তৈরি, বীজ বোপন, সার, কীটনাশক, পানি ও শ্রমিকের খরচ মিলিয়ে প্রতি শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় ১২ থেকে ১৩’শ টাকা। প্রতি শতাংশ জমি থেকে এক থেকে সোয়া মণ পেঁয়াজের ফলন পাওয়া যায়। যার হালনাগাদ বাজারদর ১২ থেকে ১৩’শ টাকা। যে কারণে মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়ে খরচের টাকা তুলতেও হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বলে মন্তব্য কৃষকদের।

চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমি

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, গেলো মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৫ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় পেঁয়াজের। ভালো বাজারদর আর বাম্পার ফলনের ফলে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের। চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমি। যার অধিকাংশ জমিতেই সম্পন্ন হয়েছে পেঁয়াজের আবাদ।

তবে এখনো পেঁয়াজ বোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে অনেক কৃষক। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে আগাম চাষাবাদ করা কৃষকের পেঁয়াজ। চাহিদানুযায়ী বাজারদর না থাকায় বিপাকে পড়েছে আগাম পেঁয়াজ চাষিরা। অর্থভাবে অধিকাংশ কৃষক বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করলেও উন্নত বাজারদরের আশায় নিজ বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে রাখছে কেউ কেউ।

জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে ৪০ শতাংশ জমিতে সাগা (গুটি) পেঁয়াজের আবাদ করেছেন তিনি। এতে করে ৩৪ হাজার টাকায় ৮ মণ গুটি পেঁয়াজ, ৬ হাজার টাকার সার, দেড় হাজার টাকার ভিটামিন, হাল চাষ, পানি ও শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয়েছে আরও ৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ওই জমি চাষাবাদে তার খরচ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

 গেলো দুই মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের মাঝে

চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলনও হয়েছে ভালো। যে কারণে ওই জমি থেকে প্রায় ৬০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। তবে বাজারে এখন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণে পেঁয়াজ বিক্রি করলে নতুন করে শ্রমিকের খরচ ও বাজারজাত করণের ব্যয় বহন শেষে মুনফার খাতা শূন্য থাকবে বলে জানান তিনি।

শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া এলাকার কৃষক আমজাদ আলী বলেন, পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করছে কৃষকেরা। এক মণ পেঁয়াজের ফলন পেতে ৯’শ থেকে এক হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর বাজারজাত করণের খরচও আছে। বাজারে এখন ৯’শ টাকা মণে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে আগাম পেঁয়াজ চাষিদের।

ঝিটকা এলাকার বৃদ্ধ কৃষক কহিনুর ইসলাম বলেন, গেলো দুই মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের মাঝে। এরইমধ্যে আবার পেঁয়াজের বাজারদর কমে গেলো। পেঁয়াজের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে সঠিক বাজারদর নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

বরংগাইল পাইকারি পেঁয়াজ বাজারের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক বলেন, সোমবার পাইকারি বাজারে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণে পেঁয়াজ বিকিকিনি হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে বাজারদরও কমে আসছে বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অনূকুল আবহাওয়ায় মানিকগঞ্জে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসের লোকজন নিয়মিত পেঁয়াজ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর