বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের ১৩৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-09-01 14:04:54

আজ ২৭ জানুয়ারি বুধবার বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের ১৩৫তম জন্মদিন।

জাপানের ইতিহাসে বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। জাপানের বন্ধুখ্যাত এই বিচারপতির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিচারপতির বাস্তুভিটা কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহে বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মধুরাপুর ইউনিয়নের ‘মৌজা সালিমপুরের’ অধীন তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন রাধা বিনোদ পাল। এলাকাটি বর্তমানে জজপাড়া নামে পরিচিত। তার বাবা বিপিন বিহারি পাল। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের কাছে তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯০৮ সালে কলকাতা প্রেসিডেনসিয়াল কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে গণিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-৪৬ সাল পর্যন্ত। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ, অক্ষশক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে নুরেমবার্গ এবং টোকিওতে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। হিটলারের মন্ত্রিপরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে। এছাড়া জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তোজোর বিচার করা হয় টোকিও ট্রাইব্যুনালে। টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ড. রাধা বিনোদ পাল।

বিচারের একপর্যায়ে রাধা বিনোদ পাল বাদে অন্য সব বিচারপতি জেনারেল তোজোকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসিতে ঝুলানোর সিদ্ধান্ত নেন। অন্যান্য বিচারপতির ধারণা ছিল, বিচারপতি পালও মিত্রশক্তির পক্ষে অনুগত থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের ৮০০ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক রায় মিত্রশক্তি এমনকি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। আইনের শাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল বিচারপতি পাল পূর্ববর্তী রায়কে বিতর্কিত প্রমাণ করে যুক্তি দেন।

এ কারণে রাধা বিনোদ পালকে জাপানিরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। মাত্র কয়েক বছর আগে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ‘মিস্টার আবে’ (যিনি বর্তমান জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাবা) কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তিনি রাধা বিনোদ পালের ছেলেকে সমগ্র জাপানের তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। জাপানের রাজধানী টোকিওতে তার নামে রাস্তা এবং কিয়োটো শহরে তার নামে রয়েছে জাদুঘর ও স্ট্যাচু।

বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যেন তাকে ভুলে না যাই এজন্য তার নামে বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এই বিদ্যালয়েই আমরা ছোট পরিসরে তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাসী আজ যে সকল মহান ব্যক্তিদের কারণে আমাদের দেশকে স্মরণ করে রেখেছে, রাধা বিনোদ পাল তার মধ্যে একজন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মহান ব্যক্তি খুব কমই রয়েছে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে কাজ করতে হবে এবং জাতীয়ভাবে তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার দাবিও জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর