ক্রমবর্ধমান রোগের কারণে জনগণকে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যকে শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হবে।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে ‘সাসটেইনেবল ফান্ডিং ফর হেলথ প্রমোশন’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী ভার্চুয়াল সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা।
সম্মেলনের আয়োজন করে থাই হেলথ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতি
ত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন থাই হেলথ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাকিত ভাতিসাতোগকিত। অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ.এম এনায়েত হোসেন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, হেলথ ব্রিজ এর অঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, পথিকৃত ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী প্রমুখ।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে খাদ্যগুলো ক্ষতিকর যেমন কোমল পানীয়, তামাক, জাঙ্ক ফুডে উচ্চ কর আরোপ করতে হবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের প্রতিটি পরিবারে একজন করে ডাইলাসিস করাতে হবে। ডায়াবেটিকসের কারণে দেশের ২০ ভাগ লোকের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের অবকাঠামো নিমার্ণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এভাবে সুস্বাস্থ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন, আমাদের রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ নিজের থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কম। ১৪ ভাগ মানুষ তাদের মোট আয়ের ১০ ভাগ আয় ব্যয় করছে স্বাস্থখাতে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে আমাদের অর্জন আছে, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার আজ বিশ্বের দরবারে সফল মডেল। মাতৃত্বকালীন মুত্যুহার কমাতে সাফল্য অর্জন করেছি। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করলে হবে না। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে সুনিদিষ্ট লক্ষ্য নিধারণ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।
এ. এইচ.এম এনায়েত হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দিয়েই কর্ম পরিকল্পনা হচ্ছে। আসাদুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা নয়, হেলথ প্রমোশন শুধু স্বাস্থ্যের ইস্যু নয়। এটি একটি সামগ্রিক বিষয়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের সাথে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই কোন না কোন ভাবে জড়িত। হেলথ প্রমোশন বিষয়ে আমাদের অন্যতম বাধা ইন্ডাস্ট্রীগুলো। এক্ষেত্রে আমাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসাই স্বাস্থ্য নয়। শারিরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন জরুরি।
দুই দিন ব্যাপি সম্মেলনে ৩টি প্ল্যানারি, ৬টি প্যারালাল (সমান্তরাল), ১টি অংশগ্রহণমূলক এবং ১টি গণমাধ্যমের সাথে শেয়ারিং সেশন আয়োজন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, আইন বিশেষজ্ঞ, নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ এবংদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় চার শতাধিকসরকারী-বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। সম্মেলনে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, নগরায়নের সম্পর্কর উপর গুরুত্ব দিয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করা হবে।