স্নাতকে সারাদেশে প্রথম মাগুরার কুইন আরা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মাগুরা | 2023-09-01 18:51:19

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক জয় করলেন মাগুরার মেয়ে কুইন আরা। তিনি মাগুরার সদরের নাজির আহমেদ কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৬৮ পেয়েছেন।

কুইন জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ঝগড়দিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর খানের মেয়ে। তার সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ এর মেডেল ও সনদপত্র। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেডেল ও সনদপত্র কুইনের হাতে তুলে দেন কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার হায়াত আলী।

জানা গেছে, বাবা-মায়ের ২ ভাই আর ৫ বোনের মধ্যে কুইন আরা চার নম্বর। ভাইবোন সবাই লেখাপড়া করেন। কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মোছাম্মৎ রেহেনা পারভীন পড়ালেখা ও নোট তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। মা শাহীন আরা বেগম গৃহিনী। বাবা মোস্তাফিজুর খান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় কুইনের বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নাম আবু বকর সিদ্দিক। স্বামীর বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে। কুইন গত ছয় দিন আগে কন্যা সন্তনের মা হয়েছেন।

কুইন আরা জানান, ভালো ফল করবেন জানতেন তিনি তবে দেশসেরা হবেন ভাবেননি। দারিদ্র্যতার কারণে তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। বাড়ির পাশে নহাটা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে ৪ দশমিক ৬৯ ও এইএসসিতে জিপিএ-৫ পান। বাবার অভাবের সংসারের টানাপড়েন ও মেয়ে হওয়ার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও দিতে পারেন নি। অভাবের কারণে এক সময় পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল।

তিনি আরও জানান, নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। পরে পার্শ্ববর্তী বেরইল নাজির আহমেদ কলেজে অনার্স কোর্স চালু হলে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। সম্প্রতি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সারা দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার বিষয়টি আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষকে অবহিত করেন। কলেজ থেকে দেশসেরা ফলের বিষয়টি কুইনকে জানান অধ্যক্ষ। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করে জীবনটা কাটাতে চাই।

কুইনের বাবা মোস্তাফিজুর খান বলেন, ‘কুইন ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় ভালো। দারিদ্রতার কারণে তাকে ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারিনি। বাইরে পড়তে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল অভাবের কারণে সম্ভব হয়নি।’

নাজির আহমেদ কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মোছাম্মৎ রেহেনা পারভীন বলেন, ‘কুইন আরা একজন আত্মপ্রত্যয়ী শিক্ষার্থী। প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও ভালো কিছু করার মানসিকতা তাকে দেশসেরা হতে সহযোগিতা করেছে।’

নাজির আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার হায়াত আলী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কুইনের সাফল্যের খবর ফোনে জানালে বিশ্বাস করতে পারিনি। প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে দেশসেরা হওয়া সত্যিই অভূতপূর্ব সাফল্য। নিভৃত গ্রামের সদ্য চালু হওয়া কলেজের একজন শিক্ষার্থী দেশসেরা হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর