প্রায় দুই যুগ আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান রবিতা রানীর বাবা। বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরপরও রবিতা দুই বোন আর মায়ের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে দিনাপাত করেন। সেই থেকে কষ্ট আর পিছু ছাড়েনি। তবুও হার না মেনে একটা এনজিওতে চাকরি নেন। চাকরির আয় দিয়ে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দেন।
কিন্তু নিজের বিয়ের জন্য বর পক্ষের বোন জামাই যুবলীগ নেতা শামল চন্দ্রকে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা যৌতুক দেন তিনি। কিন্তু যুবলীগ নেতা তার শ্যালকের সাথে বিয়েতো দূরের কথা, হাতিয়ে নেওয়া ৫ লাখ টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।
আর তাই ভূক্তভোগী ওই নারী শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে যুবলীগ নেতা শ্যামল চন্দ্রসহ দুই জনের নাম উল্লেখ করে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর বড়াইবাড়ি গ্রামের মৃত নিরঞ্জন রায়ের ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র ও রংপুর মহিপুর এলাকার সতীশ চন্দ্রের ছেলে মোহন চন্দ্র।
ভুক্তভোগী রবিতা রানী কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পুটিমারী এলাকার মৃত বীরেন্দ্রনাথ রায়ের মেয়ে। তিনি এনজিও আরডিআরএস বাংলাদেশ আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ব্যাঞ্চে চাকরি করেন।
জানা গেছে, এনজিও’র কিস্তি টাকার আদায় করতেই গিয়ে পরিচয় হয় যুবলীগ নেতা শ্যামলের সাথে। পরিচয়ের এক পর্যয়ে রবিতা রানীকে নিজ শ্যালক মোহন চন্দ্রের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হয় রবিতা রানী। কিন্তু কিছু দিন পর শ্যামল মোহনের চাকরি হচ্ছে কিন্তু টাকা প্রায়োজন এমন কথা বলে রবিতা রানীর নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা নেন। চাকরিতে যোগদান হলেই তাদের বিয়ে দেওয়া হবে বলে রবিতা রানীকে আশ্বাস দেন শ্যামল। এরপর থেকে শ্যামল নানা তালবাহানা করতে থাকেন। বিয়ে নিয়েও কোন কথা বলেন না টাকাও ফেরত দেন না। বিয়ের কথা বললে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়। আর তাই ভূক্তভোগী ওই নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী রবিতা রানী বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় ছেলের চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছি শ্যামলকে। এখন খোঁজ নিয়ে দেখি তার শ্যালকের অনেক আগে বিয়ে হয়েছে। মোহন নামে যে শ্যালকের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তা অন্য কেউ নন শ্যামল নিজেই। মুলত প্রতারণা করে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়েছেন। ভালো ছেলের সাথে বিয়ের আশায় ধার-দেনা করে টাকা দিয়েছি। টাকাও নেই, বিয়েও হলো না। প্রমাণ স্বরূপ তার সাথে কথা বলার মোবাইল রেকর্ড রয়েছে। আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা শ্যামল চন্দ্র বলেন, টাকা নিয়েছি, তার কি প্রমাণ আছে। কোন সাক্ষী নেই।
এ বিষয়ে আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।