জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নামের বানান জটিলতায় বন্ধঘোষিত পাটকল শ্রমিকরা ভাগ্য বিড়ম্বনা পড়েছেন। সরকার টাকা দিলেও মিলছে না তাদের ভাগ্যে। এতে প্রায় ১১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা আটকে গেছে বলে জানা গেছে। তবে আইডি কার্ড জটিলতা দ্রুত নিরসন করে টাকাগুলো পরিশোধ করা নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে বিজেএমসি'র আওতাধীন মিলসমূহের অবদানকৃত ও অবনবকৃত ৩৪ হাজার ৭৫৭ জন শ্রমিকের জন্য নগদ ৫০ শতাংশ বাবদ ১৭২৪ দশমিক ০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে পরিশোধযোগ্য ৫০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ কার্যক্রম সোনালী ব্যাংকে চলমান আছে।
বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের আইডি কার্ডে নামের জটিলতার কারণে ১১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা নগদ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তির জন্য ২১টি মিল হতে তথ্য সংগ্রহ করে একীভূত করা হয়েছে। আইডি কার্ডের নামের জটিলতা সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করে বকেয়া পরিশোধের বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বলে বিজেএমসি।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় হতে আরও জানা যায়, বকেয়া পাওনা বিষয়ে চলমান ২৩টি মামলার মধ্যে ১৯টি মামলা প্রত্যাহারের অনুমোদন পাওয়া গেছে। উক্ত ১৯টি মামলা শিগগিরই প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। অন্যান্য মামলাগুলো আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানায় বিজেএমসি।
বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মামলা প্রত্যাহারকারীদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসি'র চেয়ারম্যান বলেন, যে সকল শ্রমিক ইতিমধ্যেই মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে তাদের অর্থ এখনো প্রদান করা সম্ভব হয়নি। কারণ অর্থমন্ত্রণালয় যখন অর্থ চাওয়া হয়েছিল তখন যে সকল শ্রমিকের মামলা ছিল তাদের অর্থ আসেনি। যে সকল মামলা প্রত্যাহার হয়েছে এখন নতুন করে তাদের জন্য অর্থ চাইতে হবে। এই পর্যন্ত ৭৬ টি মামলা প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি হলেও এই অর্থ চাওয়া হয়নি। আরো কিছু মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হলে সেগুলোর সহ অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ চাওয়া হবে। বার বার একই বিষয়ে অর্থ না চেয়ে এক দুই মাসের মধ্যে আরও কিছু অগ্রগতি হলে একসাথে অর্থ চাইতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ দিয়েছে বলে তিনি বৈঠকে অবহিত করেন।
শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধের জন্য শ্রমিকদের করা অনিষ্পন্ন মামলা এবং আপিল রিভিউ মামলাগুলো বিজেএমসিকে প্রত্যাহারের সুপারিশের বিষয়ে বিজিএমসি'র চেয়ারম্যান বলেন যে, মোট মামলার সংখ্যা ছিল ২৩৯ টি এবং এর সাথে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ৩০১ জন। শ্রমিক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা ১৫২টি এবং জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৮৪ জন। মিলকর্তৃক দায়েরকৃত মামলা ৮৭ টি এবং জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ১১৭ জন। ইতোমধ্যে ৭৪ টি মামলা মিল কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং দু'টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সেই হিসেবে ৭৬টি মামলা প্রত্যাহার হয়েছে এবং পেন্ডিং রয়েছে ১৬৩ টি মামলা। ১৬৩ টি মামলার আরো ২৩ কি মামলা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে যে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। এ কারণে সরাসরি প্রত্যাহার না করে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এই ২৩ টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
আরো কিছু মামলা রয়েছে যেগুলো প্রত্যাহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা হলো শ্রমিক কর্তৃক দায়েরকৃত। মিল কর্তৃক দায়েরকৃত আরো ৫০টিরও অধিক মামলা রয়েছে যেগুলো মিলে ভাঙচুর ক্ষতিসাধন চুরি ইত্যাদি ফৌজদারি অপরাধের সাথে জড়িত। সরাসরি ফৌজদারি আদালতে ৭টি মামলা এবং অন্যান্য মামলাগুলো বিভিন্ন সিভিল কোর্টে আছে যা প্রত্যাহার করার জন্য সুপারিশ করা হয়নি। আরো কিছু মামলা আছে যেগুলো প্রমোশন বা এ সংক্রান্ত ১৪০ টি মামলা উচ্চ আদালতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংস্থা কর্তৃক দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিজেএমসি হতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহারকৃত শ্রমিকদের পাওনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইনগত বাধা থাকবে না। তবে মামলাধীন শ্রমিকদের বিপরীত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার (৩১ মার্চ) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য শাজাহান খান, শামসুন নাহার এবং মোঃ আনোয়ার হোসেন (হেলাল) অংশগ্রহণ করেন। এর আগে ১১তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এতথ্য জানা যায়।