মুন্সিগঞ্জ সদরের মুন্সিরহাটের মুদি দোকানদার হারাধন সাহা। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছিল তার। এই ছোট পরিবার নিয়ে জেলা শহরের মালোপাড়া এলাকায় বসবাস ছিল তাদের। কিন্তু শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব এখন হারাধন সাহা। বেঁচে থাকার ইচ্ছা ও এখন নেই, ভাঙা কন্ঠে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে হারাধন সাহা বলেন, সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্ত্রীর লাশ দাহ করার সময় খবর পাই ডুবে যাওয়া লঞ্চ টেনে তোলা হচ্ছে। খবর পেয়ে স্ত্রীর লাশ কোনো রকম দাহ করে ছুটে আসি দুই ছেলে বিকাশ সাহা (২২) আর আকাশ সাহার (১২) লাশ পাওয়ার আশায়। কিন্তু লঞ্চ উদ্ধার হলেও আমার দুই ছেলের লাশ লঞ্চে পাওয়া যায়নি। পরে রাত ৭টার দিকে বড় ছেলে বিকাশের লাশ নদীতে ভেসে উঠলে উদ্ধারকারীরা লাশ উদ্ধার করে আনে। কিন্তু ছোট ছেলের লাশ এখনও পাচ্ছিনা। উদ্ধারকারীরা স্পিডবোট নিয়ে খুঁজছে।
তিনি আরও জানান, রোববার সকালে আমার স্ত্রী সুনিতা শাহা ২ ছেলে বিকাশ সাহা (২২) ও আকাশ সাহাকে (১২) নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা জাতীয় চক্ষু ইন্সটিটিউট হাসপাতালে। সেখানে আকাশ সাহাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ ঘাট হয়ে মুন্সিগঞ্জ ফিরছিল তারা। ডুবে যাওয়া সাবিত আল হাসান লঞ্চের যাত্রী ছিলেন তারা। নিহত আকাশ সাহা স্থানীয় একটি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বিকাশ শাহা টেকনিশিয়ান ছিল, কাতার থেকে ভিসা এসেছে তার। আগামী ১২ মে কাতার যাওয়ার কথা ছিল বিকাশের।
এদিকে তার আপন ভাই বোন বলতে কেউ নেই। দুই ছেলে ও স্ত্রীই ছিল তার আপনজন। এক সঙ্গে তাদের হারিয়ে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি বলছেন আমার ভিটায় বার্তি জ্বালানোর কেউ রইল না। আমার ছেলেদের নিয়ে দেখা সব স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। হাসিখুশি পরিবারটি একদিনে শেষ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছাও এখন নেই আমার।
মঙ্গলবার পঞ্চসারের মুন্সিগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটে সৎকার সম্পন্ন হয়েছে আকাশের। এর আগে একই স্থানে সৎকার সম্পন্ন হয় হারাধনের স্ত্রী ও বড় ছেলের।