নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুশৃঙ্খল লাইন ধরে দাঁড়িয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন করোনায় খাদ্য সংকটে পড়া ঢাকায় অবস্থানরত অনেক নিম্ন শ্রেণির অসহায় এবং ছিন্নমূল মানুষ। দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশ মানুষকে দেখে মনে হয় তারা কেউ আশেপাশে থাকে আবার কেউ দূর থেকে এসেছেন। এখানে খাবার নিশ্চিত এবং সেটা মানের দিক দিয়েও নিরাপদ হওয়ায় ক্লান্তি ও হতাশা নেই অপেক্ষারত মানুষের চোখে মুখে।
কেউ কেউ অনেক আগে থেকে এখানে বসে আছে আবার কেউ কেউ তখনও এদিক ওদিক থেকে ছুটে আসছে। মাইকে কিছুক্ষণ পর পর ‘মাক্স মুখে দিন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’- ঘোষণা করা হচ্ছে। ছেলে মেয়ের পাশাপাশি অনেক বয়স্ক মহিলা পুরুষ এমনকি একই পরিবারের একাধিক মানুষ যারা এই মহামারী করোনায় সরকারের ঘোষিত লকডাউনে কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এসেছেন ছাত্র লীগের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিতরণ করা সেহেরির খাবার নিতে। নির্ধারিত সময়ে মাইকে খাবার দেওয়ার কথা ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে সবাই এক এক করে ছাত্রলীগের নেতাদের হাত থেকে খাবার নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ সেখানে বসেই খাচ্ছেন।
সরজমিনে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাস্তায় এ দৃশ্য দেখা যায়। পবিত্র রমজানে মাসব্যাপী সেহরি বিতরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং অসহায়-দুঃস্থদের মাঝে প্রথম রমজান থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উপস্থিত থেকে সেহরি বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন। সেহরি বিতরণ কর্মসূচির আজ সপ্তম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও এর আশেপাশের এলাকায় শিক্ষার্থী ও অসহায়-দুঃস্থদের মাঝে প্রায় এক হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
গভীর রাতে এভাবে ছাত্রলীগের হাত থেকে সেহরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলো।
নাতিসহ খাবার নিতে আসা সত্তর ঊর্ধ্ব এক মহিলা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘হেরা আমগোরে খাওন না দিলে পেডে ভাত পড়ত না। পানি খাইয়া ওযা (রোজা) থাকির লাগিল হায়।’
গুলিস্তান থেকে আসা আইনুল (৭০) নামে এক বৃদ্ধ খাবার পেয়ে বলেন, ‘অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়। কেউ খাবার দিলে পেটে যায়, না দিলে অনাহারে থাকতে হয়। যারা এই মধ্যরাতে খাবার দিচ্ছেন আল্লাহ তাদের ভালো করুক।’
খাবার পেয়ে কাশেম নামে একজন বলেন, ‘আল্লাহ ওমাগুলার (ওদের) আশা পূর্ণ করুক। যুগ যুগ বাঁচি থাউক পোলাপানগুলা।’
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিতের ন্যায় এবারো দেশের দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। রমজানের শুরু থেকে আমরা ঢাকায় অবস্থানরত আসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সেহরি ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছি। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা রমজানের পরেও অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করব।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন চলছে। রমজানের এই সময় কেউ যাতে সেহেরি ও ইফতার নিয়ে সংকটে না পড়েন, সেই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ হতে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।’
এছাড়াও শিশুদের জন্য শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে জরুরী অক্সিজেন ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যাবস্থা করার কথাও জানান লেখক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগ শাখার নেতারা-কর্মীরা।