রাজশাহী শহরে আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিউটি পার্লার। নারী উদ্যোক্তাদের কেউ স্বল্প পুুঁজি নিয়ে, আবার কেউ বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে পার্লারগুলো দিয়েছেন। করোনার আগ পর্যন্ত তাঁরা ভালই ছিলেন। পার্লারেই দেখছিলেন সাফল্যের মুখ। কিন্তু করোনা পাল্টে দিয়েছে পরিস্থিতি। এবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ঈদের আগেই পার্লারে ভিড় হয়নি। অথচ অন্যান্য সময় ঈদের আগের কয়েকদিন ভিড় লেগে থাকত পার্লারে। করোনাকালের ঈদ উপলক্ষে নারীরা পার্লারে রূপচর্চায় না আসার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পার্লার মালিকেরা।
রাজশাহীর কয়েকজন পার্লার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগেও তাঁরা ভাল নেই। কাজ না থাকায় কর্মীরা বসে আছেন। তাঁদের ঈদও ভাল যাবে না।
জানা যায়, পার্লার ওনার অ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহীর অর্ন্তভুক্ত পার্লারের সংখ্যা ১৫০টি। এছাড়াও অ্যাসোসিয়েশনের বাইরে আছে প্রায় আরও ১৫০টি পার্লার। পার্লারগুলোতে কাজ করে সংসার চালান প্রায় সাত শতাধিক নারী। কাজের ওপরেই তাঁদের মজুরি হয়ে থাকে। এবার ঈদে কাজ কমে যাওয়ায় কমেছে তাঁদের আয়। এদিকে করোনার কারণে ব্যবসা ভাল না হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন মালিকরা। অনেক নারী উদ্যোক্তাই গুটিয়ে নিয়েছেন ব্যবসা। যার কারণে পার্লার থেকে কর্মী ছাঁটাই করেছেন তাঁরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুইপক্ষই। এবার ঈদে তাঁদের একপয়সাও আয় হয়নি। অথচ আগে ঈদের সময় পার্লারে তাঁরা ব্যস্ত সময় কাটাতেন।
নগরীর কাজলা এ্যারিস্টোক্র্যাট পার্লারের মালিক হেমন্তী রাণী হিমু বলেন, ব্যবসা খুব খারাপ। ঈদের আগে পার্লারগুলোতে খুব ভিড় থাকে। কিন্তু এখন করোনার কারণে উল্টো চিত্র। করোনাকাল না হলে ঈদের ১৫ দিন আগেই বুকিং আসতো। এখন কোন বুকিং নেই। তেমন বড় কোন কাজও নেই। কর্মীদের বোনাস দেওয়া দূরের কথা, বেতন দিতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন ক্রান্তিকালে বিউটিশিয়ানদের সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন রাজশাহীর এই নারী উদ্যেক্তা।
পার্লার ওনার এসোসিয়েশন অব রাজশাহীর সভাপতি রোকসানা হুদা বলেন, অমার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এটা সবচেয়ে বাজে সময় পার করছি। এর আগে এত ক্ষতির মুখে কখনই পড়তে হয়নি। গতবার ঈদের সময় পার্লার পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়েছে। এবার খুলে রেখেও লাভ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ওনার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা কর্মীদের কিছু সহায়তা করেছি। তবে সরকরের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলে নারী উদ্যেক্তাদের জন্য ভাল হতো। অনেক মেয়েরাই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।
এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিল অহনা বলেন, আমার সাতজন কর্মী ছিল। এখন চারজনকে রাখতে পেরেছি। এই সময়ে পার্লার ভাড়ার টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের সময়ে আমরা বসে থাকার সময় পাই না। কিন্তু এখন হাতে অনেক সময়। ঈদ চলে এলেও কাজ নেই। এভাবে চললে পার্লার বন্ধ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নারী উদ্যেক্তাদের প্রণোদনা দিয়ে পাশে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই নারী উদ্যেক্তা।