এক বছরে ৯৫ কেজি ৫০০ গ্রাম হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন বিভাগের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ২০ জন শিকারি। পলাতক রয়েছেন চারজন বলে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ সূত্র জানায়।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে হরিণ শিকারিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গুলি করে বা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার অব্যাহত রেখেছেন তারা।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ সূত্র থেকে জানা যায়, সুন্দরবনে হরিণ রক্ষা প্রকল্প চলমান। হরিণ সুরক্ষায় সুন্দরবনে বন বিভাগের চারটি কেল্লা আছে।
তথ্যদাতা, উদ্ধারকারী, আসামি ধরিয়ে দেওয়া ছাড়াও লোকালয়ে আসা হরিণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই হরিণ রক্ষা প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে।
তারা আরও জানায়, সুন্দরবনে মায়া হরিণ ও চিত্রা হরিণ নামের দুই প্রজাতির হরিণ পাওয়া যায়। মায়া হরিণের সংখ্যা কম, চিত্রা হরিণের সংখ্যা বেশি। হরিণ বছরে দুইবার বাচ্চা জন্ম দেয়।
সূত্রটি আরও জানায়, এর মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর চার মাস ২৫ দিনে ৭৮ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়।
এ ছাড়া গত এক বছরে একটি মৃত হরিণ, এক পিস হরিণের চামড়া, দেড় হাজার পিস হরিণ মারার ফাঁদ, ৫০০ কলিজা জব্দ করা হয়।
সুন্দরবনে কর্মরত কয়েকজন জেলে ও মৌয়াল নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে অনুপ্রবেশ কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এ সময় শিকারিরা অনেকেই অন্য পেশায় চলে যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর প্রশাসনিক দুর্বলতা বিশেষ করে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ নিজেদের দুর্বল বোধ করায় শিকারিরা আবারও বনে ঢুকতে শুরু করেন। এদের মধ্যে অনেকে রয়েছে বনদস্যু।
মাঝে মাঝে শিকারিরা গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি হরিণের মাংস ও ফাঁদ উদ্ধার করা গেলেও বড় অংশের শিকারিরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
৫ আগস্ট সাতক্ষীরা কারাগার থেকে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ৮৭ জন আসামির মধ্যে একটি অংশ নিজেদের রক্ষায় সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে। তাদের কেউ কেউ সুন্দরবনের ভারতের অংশে পালিয়ে গেছে। এ ছাড়া শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর থানায় লুট হওয়া সরকারি ও জনগণের লাইসেন্স করা বন্দুক নিয়ে গাবুরা, পদ্মপুকুর, হরিনগর, রমজাননগর, পাইকগাছা ও কয়রাসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মসমর্পণ করা বনদস্যুদের একটি অংশ সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করছে। তারা খাদ্য সংগ্রহ করতে হরিণ শিকার করছে। তারা জেলেদের নৌকা থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। ভয়ে অনেকেই এখন পাস নিয়ে মধু সংগ্রহ বা মাছ ধরতে বনে যেতে সাহস করছে না।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ ও বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি রোধ ও বনজীবীদের নিরাপত্তায় বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় খুব শীঘ্রই বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে।