বেসরকারি চিকিৎসকদের নতুন সংগঠন বিএনজিডিএ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 05:28:01

এখনও বাংলাদেশের বড় একটা অংশের মানুষের সরকারি হাসপাতালে শতভাগ চিকিৎসা দেওয়া নিশ্চিত করা যায়নি। তাই বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। আর সেখানে কাজ করেন হাজার হাজার রেজিস্টার্ড চিকিৎসক। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক না হলেও মানুষের জন্য মানবতার সেবায় থাকেন মানুষের পাশে। এই করোনা মহামারিতেও বাবা যখন স্পর্শ করেন না সন্তানকে, স্বামী যখন স্পর্শ করেন না প্রিয়তমা স্ত্রীকে, জঙ্গলে মা’কে ফেলে যান সন্তানরা তখন কোভিড-১৯ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সরকারি বেসরকারি সকল হাসপাতালেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এতো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও সঠিক সময়ে বেতন না হওয়া, মালিক পক্ষের ইচ্ছে মাফিক চাকরিচ্যুত করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উন্নত এবং সক্ষম। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের উত্তোরত্তর উন্নীত সাধিত হলেও, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছে নানান অসমাঞ্জস্যতা, অপ্রাপ্তি, বৈষম্য এবং হতাশা। বেসরকারি চিকিৎসকদের নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতেই ২০২০ সালে ডা. ফারহান সাদিক খানের উদ্যোগে, ডা. খালেদ শওকত আলী ও ডা. শাহেদ হায়দার চৌধুরীর দিক নির্দেশনায় একঝাঁক তরুণ চিকিৎসকদের হাত ধরে তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন বাংলাদেশ নন গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনজিডিএ)।

সংগঠনটির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৭ জুন ডা. দেবদাস পালকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। বিএনজিডিএ গত এক বছরে বেসরকারি ডাক্তারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে, পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি ডাক্তারদের বিভিন্ন সমস্যায়। তারই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ নন-গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনজিডিএ) সাংগঠনিক কাজকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে গত ২৫ মে বেসরকারি চিকিৎসকদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ডা. খালেদ শওকত আলীকে সভাপতি এবং ডা. মো. ওবায়দুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে মোট ১৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। উক্ত সভায় সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. ফারহান সাদিক খানকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ নন-গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

বিএনজিডিএ-এর নতুন কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহ সভাপতি-ডা. শাহেদ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- ডা. কায়েস আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- ডা. অংকুর দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক- ডা. ফারহান সাদিক খান, অর্থ সম্পাদক- ডা. দেবদাস পাল, দফতর সম্পাদক- ডা. সজীব নজরুল হৃদয়, যুগ্ম দফতর সম্পাদক- ডা. মো. কাজী সিফাত আক্তার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক- ডা. মুশতাক রহমান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক- ডা. আকাশ মাহমুদ সোহেল, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক- ডা. আব্দুল্লাহ এ মামুন, ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক- ডা. নাহিদ আনোয়ার খান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক- ডা. পারসা রহমান, যুগ্ম মহিলা বিষয়ক সম্পাদক- ডা. সুমাইয়া সামাদ দীপা।

বিএনজিডিএ-এর নবগঠিত কমিটি বেসরকারি ডাক্তারদের কিছু চিহ্নিত সমস্যা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট তুলে ধরতে চায়।

স্বাস্থ্য সেবা মানুষের মৌলিক আধিকার। উন্নত জাতি গঠনে একটি শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য কাঠামোর ভূমিকা অপরিসীম। আর এই স্বাস্থ্যসেবার প্রথম সারিতে আছেন ডাক্তারগন। যেখানে বাংলাদেশের শতকরা ৭৫% ডাক্তারই বেসরকারি সেক্টরে কর্মরত, সেখানে বেসরকারি ডাক্তারদের জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো, নেই কর্মস্থলে পেশাগত নিরাপত্তা, নেই চাকরির বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এমনকি বেশকিছু মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের বেতন সঠিকভাবে পরিশোধ করছে না। ফলে, সিংহভাগ বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তীব্র অসন্তোষ, অপ্রাপ্তি এবং হতাশা। যা ধাক্কা লাগতে পারে মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে।

সংগঠনের সভাপতি ডাক্তার খালেদ শওকত বলেন, চিকিৎসকরা মানুষের জন্য কাজ করেন, চিকিৎসকরা যদি নিরাপদ, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারেন তাহলে মানুষকে অনেক গুণ বেশি সেবা দিতে পারবেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত, চিকিৎসা সেবা ও মান উন্নয়নে কিভাবে আরও ভালো কাজ করা যায় সে ব্যাপারে তারা সরকারের সাথে কাজ করবেন। বাংলাদেশের চিকিৎসাকে আন্তর্জাতিকমানে নিয়ে যেতে কাজ করার আশা প্রকাশ করেন ডাক্তার খালেদ শওকত আলী।

করোনাকালীন দুর্যোগে সারা দেশ যখন অবরুদ্ধ, তখন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাহসিকতার সাথে চিকিৎসা দিয়েছেন। কোভিড-১৯-এর মত মহামারি সামাল দিতে গিয়ে গত ৯ জুন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৮ জনের বেশি চিকিৎসক, যার বড় অংশই বেসরকারি চিকিৎসক। প্রায় সাড়ে চার হাজার বেসরকারি চিকিৎসক বিনা বেতনে ৩৩৩ এর জাতীয় টেলিমেডিসিন হটলাইনের মধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন।

এছাড়াও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইচআইভি, হেপাটাইটিসসহ নানা ধরনের মারাত্মক সংক্রামক রোগের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রেডিয়েশন ও কেমিকেলের সংস্পর্শে এসে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, এতো কিছুর পরও আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকিভাতা/ক্ষতিপূরণ। যা আন্তর্জাতিক তথা বাংলাদেশ লেবার আইন-২০০৬ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রণোদনা তো দূরের ব্যাপার, আমরা পাইনি আমাদের কাজের স্বীকৃতিটুকুও।

এমতাবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি সমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নে জন্য বাংলাদেশ নন-গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনজিডিএ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

দাবিসমূহ হলো- বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকল্পে, বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য, বেসরকারি চিকিৎসক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট, যুগোপযোগী বেতন কাঠামো ও সার্ভিস রুলস প্রণয়ন এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

>>করোনার মহামারির সময় যে সকল প্রতিষ্ঠান চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি অথবা আংশিক কর্তন করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চিকিৎসকদের সমস্ত বকেয়া বেতন- বোনাস অনতিবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।

>>কর্মক্ষেত্রে সকল চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে প্রণীত ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন’ এর বাস্তবায়ন করতে হবে।

>>বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের তদারকিতে বেসরকারি চিকিৎসক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

>> চিকিৎসকদের মধ্য হতে স্বাস্থ্য খাতে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রনোদনা ও সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

একজন ডাক্তার যখন একটি নিরাপদ কর্মস্থল পাবেন, পাবেন চাকরি স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা, সঠিক সময়ে বেতন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, তখন তিনি স্বাস্থ্যসেবায় পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারবেন। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য নিয়ামক। এর ফলে দেশের সাধারণ জনগণ যেমন পাবেন উন্নত স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা, তেমনি চিকিৎসকরা পাবেন উন্নত ও নিশ্চিন্ত কর্মপরিবেশ।

একত্রে থাকুন, পরিবর্তন আসবেই এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে বেসরকারি চিকিৎসক সমাজের জন্য কাজ করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ নন-গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, দেখতে দেখতে আজ স্বাধীনতার প্রায় ৪৯ বছর পার হতে চলছে। এই ৪৯ বছরে দেশে শিল্প, স্বাস্থ্য ও আর্থসামাজিক খাতে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। এদেশের অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। যা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে। তাই সকলে মিলে চেষ্টা করলে একত্রে থাকলে পরিবর্তন আসবেই। তাই বাংলাদেশ নন-গভ. ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, তাদের স্লোগান ঠিক করেছে ‘একত্রে থাকুন, পরিবর্তন আসবেই’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর