শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিবর্তনের ভালো-মন্দ

ঢাকা, জাতীয়

মাজেদুল নয়ন; স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 14:29:16

বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমনের ২ নং গেট দিয়ে প্রবেশ করছি। নিরাপত্তা তল্লাশি দিয়ে প্রবেশের সময় এক ব্যক্তি কর্তব্যরত আনসার সদস্যের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন। যাত্রী কিছুতেই তার হাতের ব্যাগটি তল্লাশিতে দিতে রাজি নন। তার যুক্তি এই প্রথম গেটেই সবকিছু তল্লাশি কেন করা হবে! তবে আনসার সদস্যদের অনড় অবস্থানে তিনি বাধ্য হলেন। আমার মতে, শুধুই সময়ক্ষেপণ হলো।

ভেতরে প্রবেশ করলে পূর্বে চেক ইন কাউন্টারগুলোর আগেই একটি ব্যরিকেড ছিল। সেটি এখন উঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ফলে যাত্রীদের বিদায় জানাতে আসা স্বজনেরা আরেকটু বেশি সময় থাকতে পারেন এখানে। আমার ব্যাংককের ফ্লাইট রাত ২ টা ১৫ মিনিটে। এখনো চেক-ইন কাউন্টার খোলেনি। তাই বিক্ষিপ্তভাবে এদিকে সেদিকে হাঁটতে থাকলাম৷  তবে এখানে বসে একটু অপেক্ষা করব, তারও উপায় নেই। কারণ চেয়ার সর্বসাকুল্যে ২০ টি৷ সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দেরি করায় প্রায় কয়েকশ যাত্রী প্রায় গত ৬ ঘণ্টা ধরে এখানে অপেক্ষা করছেন৷ দাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ থাকা যায়! অনেকে ফ্লোরে বসে রয়েছেন। অনেকেই আবার ট্রলিতে বসে অপেক্ষা করছেন৷ যা দেখতে দৃষ্টিকটু মনে হলো।

পুরোটা রাত জেগে থাকতে হবে ভেবে একটা খাবারের দোকান থেকে কফি অর্ডার করলাম। কফি হাতে দেয়ার পর দোকানদার বললেন, কফি শেষ করে ফেলনা কাপটি আপনি আমার দোকানে ফেরত দিলে ১০ টাকা ফেরত পাবেন৷ আর পাশের বিনে ফেললে ৫ টাকা ফেরৎ পাবেন। আমি অবাক হলাম! জানতে চাইলাম, এটা কি শুধু এই দোকানেরই অফার?

তিনি বললেন, না, পুরো এয়াপোর্টের সব খাবারের দোকানেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এয়ারপোর্টকে পরিষ্কার রাখতে সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বাইরে যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে ৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশও রয়েছে।

আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম, অনেক বিন রয়েছে। তাই পরিষ্কার রাখার এ উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কিন্তু!

হ্যাঁ, কিন্তু রয়েছে। দুইজন চায়নিজ যাত্রী দোকানে এসে কফি অর্ডার দিলেন। কফি নেয়ার পর দোকানি কিন্তু তাকে সেই নিয়মটি বুঝিয়ে বলতে পারলেন না৷ আর বিভিন্ন স্থানে যেহেতু নির্দেশিকাটি শুধু বাংলায় লেখা রয়েছে তাই অন্য ভাষাভাষী যাত্রীদের পক্ষে এই ৫ টাকা ফেরত পাওয়ার নিয়মটি অজানাই থেকে যায়।

ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরও আমার হাতে অফুরন্ত সময়। এয়ারপোর্টের দক্ষিণ দিকে ৪ এবং ৪/এ গেটের দিকে অনেকটুকু লেন বর্ধিত করা হয়েছে। বেশ পানির পিপাসা পেয়েছিল। পানির বোতল কেনার আগে ভাবলাম, এয়ারপোর্টে যাত্রীদের জন্য তো ফ্রি পানির ব্যবস্থা থাকার কথা৷ ৪ থেকে শুরু করে ১১ নং গেট পর্যন্ত কোথাও পানি খাওয়ার ব্যবস্থা চোখে পড়লো না৷ যে স্টাফরা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে প্রত্যেকেই বাথরুমের বেসিন থেকে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। বললেন, আমরা সবাই এই পানিই খাই ৷ পুরো এয়ারপোর্টের পানিই শতভাগ বিশুদ্ধ। তাই বলে বাথরুমের বেসিনের কলের নিচে হাত দিয়ে পানি খেতে হবে! একটা পানি খাওয়ার ফিল্টার কি দেয়া যেতো না৷

১০ থেকে ১১ নং গেটের দিকে সর্ব উত্তরের বাথরুমের সামনে একটি ফিল্টার মেশিন চোখে পড়লো। যেখানে কলের সামনে মুখ ধরে ট্যাপে চাপ দিলে নিচ থেকে পানি মুখ বরাবর এসে পৌঁছায়। দেশের বাইরে অনেক এয়ারপোর্টেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। আমি খুশি মনে এগিয়ে গিয়ে ট্যাপের সবগুলো অপশন টেপার পরও পানি বের হলো না৷ বোঝা যায় মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হায়!

পেছনের বাথরুমটায় চোখ পড়লো। এগিয়ে গেলাম৷ বিমানবন্দরের অন্য বাথরুমগুলো বাইরে থেকে দেখতে পরিচ্ছন্ন মনে হয়, তবে এটি বাইরে থেকে দেখতেই জরাজীর্ণ। আসলে এই বাথরুমটি হয়তো একেবারে উত্তরে হওয়াতে ব্যবহার কম, ফলে এই অবস্থা! তবে শুধু তাই নয়, বাথরুমের মেঝে যেমন দাগ পড়া, তেমনি দুটি টয়লেটের দরজাও দেখতে মলিন ও অপরিষ্কার। চারপাশের দেয়ালে তাকালে জরাজীর্ণই মনে হবে। আর শুধু এই বাথরুম নয়, পুরো টানেলের কোন বাথরুমে  টিস্যু পেপার খুঁজে পাওয়া গেল না।

১০ নং গেটের সামনেই রয়েছে স্মোকিং জোন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মতে এয়ারপোর্টে স্মোকিং জোন খোলা আকাশের নিচে হতে হয়। যেভাবে এখন অন্য সব দেশের এয়ারপোর্টেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটি বারান্দার মতো টানেল বানিয়ে সেখানে স্মোকিং জোন বানানো হয়। তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখনো কাঁচ ঘেরা বদ্ধ এক স্মোকিং জোন। যেখানে মাত্র দুটি এয়ারকুলার-যা স্মোকিং জোনের উৎকট গন্ধ বাইরে বের হতে বাধা দিতে সক্ষম হয় না।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর