আবার লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই করোনার থাবা আগের দিনের পরিসংখ্যানকে পেরিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে সংক্রমণের হটস্পট। পিকটাইমের বিপজ্জনক ঘড়ি টিকটিক করছে বহু স্থানে। সমগ্র বাংলাদেশ যেন আবার নিপতিত হতে চলেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর আবর্তে।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় বাংলাদেশের মৃত্যুর সংখ্যা ১০৮ আর এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনে। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৯ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জন।
এদিকে, বিশ্বের ৮৫টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে করোনার ডেল্টা রূপের। আগামী দিনে এই রূপই বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডব চালাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
২২ জুন অতিমারি সংক্রান্ত একটি সাপ্তাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হু। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার আলফা রূপ পাওয়া গিয়েছে ১৭০টি দেশে। বিটা রূপ ১১৯টি দেশে, ৭১টি দেশে করোনার গামা রূপ এবং ডেল্টা রূপ পাওয়া গিয়েছে ৮৫টি দেশে।
বৈশ্বিক মহামারির পুনঃপদধ্বনির প্রাক্কালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ক্রমবর্ধিষ্ণু সংক্রমণের নাজুক চিত্র দেখা যাচ্ছে গত কয়দিন ধরেই। কয়েক সপ্তাহ থেমে থাকার পর ঊর্ধমুখী করোনায় কোথাও কোথাও নমুনা দিতে আসা রোগিদের শতভাগের মধ্যেই করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। খুলনা, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, যশোরে হু হু করে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে ক্রমেই বাড়ছে উচ্চ বিপজ্জনক এলাকা। আক্রান্ত হচ্ছে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরাও।
সীমান্তবর্তী উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মতোই করোনার বিপদ পূর্বাঞ্চলের সিলেট, চট্টগ্রামেও হানা দিয়েছে।চট্টগ্রামে গত ১৪ জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪২৭ জন। পরবর্তী ১০ দিনে আরও ৯৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। চলতি জুন মাসের বাকি ছয় দিনে করোনা আক্রান্তের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারও যেকোনও সময় শাটডাউনের কথা জানিয়েছে। তবে, করোনার চরম বিপদঘণ্টার মধ্যেও মানুষের উদাসীনতার খবর আসছে নানা স্থান থেকে। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা করছে না অনেকেই, যা করোনার বিস্তারকে সর্বগ্রাসী করতে পারে। বিচ্ছিন্ন লকডাউনেও সামাজিক সংক্রমণ কমছে।
আশঙ্কার বিষয় হলো ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ও আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়ছে স্বাস্থ্য খাতেও। আইসিইউ বেড পেতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে হাহাকার। রোগির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সঙ্কটের শঙ্কা করা হচ্ছে। রোগি আরও বাড়তে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থা তা কতটুকু সামাল দিতে পারবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
এদিকে, বিশ্বব্যাপীই ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে টানাপোড়ন। ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনেশন প্রায়-সম্পন্ন করলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্মুখ হয়ে আছে ভ্যাকসিনের জন্য। টাকা দিয়েও প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে ভ্যাকসিনের নির্ধারিত চালান আসছে না। অদৃশ্য এক 'ছায়া-ভ্যাকসিন-যুদ্ধ'-এর অন্ধকার ভীতিতে আচ্ছন্ন করোনা কবলিত বিশ্ব। চলছে 'ভ্যাকসিন পলিটিক্স' আর 'ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি', যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বের গরিব দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ।
উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে দেড় বছরে করোনা যখন প্রচণ্ড বেগে আবার ঊর্ধমুখী, তখন সরকারি-বেসরকারি তরফে সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। কালক্ষেপণ না করে করোনার ধাবমান স্রোত মোকাবেলায় কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই এখন জরুরি বিবেচ্য বিষয়।