১৯০ বছরে পাবনা

রাজশাহী, জাতীয়

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 16:32:52

উত্তর জনপদের প্রাচীন জেলা পাবনা। আজ ১৬ অক্টোবর প্রাচীন এই জেলা শহর ১৯০ বছরে পা দিয়েছে। ১৮২৮ সালে তৎকালীন সরকার ৩১২৪ নম্বর স্মারকে পাবনাকে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

তথ্যমতে, সে সময়ের পাবনা-সিরাজগঞ্জ বৃহত্তর এ জেলা ঘিরেই ছিল পদ্মা-যমুনা নদী। এই প্রাচীন জনপদের চারপাশ থেকেই আলাদা হয়ে গেছে ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলা। পূর্ব প্রান্ত দিয়ে যমুনা নদী বয়ে গেছে এবং পশ্চিমে নাটোর জেলা। পাবনার কাজীরহাট নামক জায়গায় পদ্মা ও যমুনা নদী পরস্পর মিলিত হয়েছে।

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯৭ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৫০ হাজার ও নারী ১২ লাখ ৪৭ হাজার জন। ৩৫১ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলা বর্তমানে নয়টি উপজেলা, নয়টি পৌরসভা, ১১টি থানা ও ৭৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পাবনা স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জেলার বেশির ভাগ অংশ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখনকার দিনে এসব এলাকায় সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কর্মচারীদের খুব অভাব ছিল। পুলিশের অযোগ্যতা এবং জমিদারদের পক্ষ থেকে ডাকাতির ঘটনার তথ্য গোপন রাখা বা এড়িয়ে যাওয়া হতো। গ্রামাঞ্চলে ডাকাতরা দলে দলে ঘুরে বেড়াত। চলনবিল এলাকায় জলদস্যুদের উপদ্রব চলে দীর্ঘদিন ধরে। এদের প্রতিরোধ করতে ও শাসনতান্ত্রিক সুবন্দোবস্তের জন্য কোম্পানি সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী পাবনায় সামগ্রিকভাবে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে তা স্থায়ী রূপ লাভ করে এবং তাকে স্বতন্ত্র ডেপুটি কালেক্টর রূপে নিয়োগ করা হয়।

রাজশাহী জেলার পাঁচটি থানা ও যশোর জেলার তিনটি থানা নিয়ে সর্বপ্রথম পাবনা জেলা গঠিত হয়। বিভিন্ন সময় এর এলাকা ও সীমানার পরিবর্তন ঘটেছে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বর যশোরের খোকসা থানা পাবনাভুক্ত করা হয়। অন্যান্য থানার মধ্যে ছিল রাজশাহীর খেতুপাড়া, মথুরা, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও পাবনা। যশোরের চারটি থানা ধরমপুর, মধুপুর, কুষ্টিয়া ও পাংশা। তখন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ ডব্লিউ মিলস জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন পাবনায়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে সেশন জজের পদ সৃষ্টি হলে এ জেলা রাজশাহীর দায়রা জজের অধীনে চলে যায়। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জেলার পূর্বসীমা নির্দিষ্ট করা হয় যমুনা নদী। ১২ জানুয়ারি ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে মোমেনশাহী জেলা থেকে কেটে নিয়ে ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মহকুমায় উন্নীত করে পাবনাভুক্ত করা হয়। নিযুক্ত করা হয় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। এর ২০ বছর পর রায়গঞ্জ থানা এ জেলায় যুক্ত হয়।

নীল বিদ্রোহ চলাকালে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হলে লর্ড ক্যানিং ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে জেলায় একজন কালেক্টর নিযুক্ত করেন। এর আগে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে জেলার ডেপুটি কালেক্টর হয়ে আসেন টি ই রেভেন্স। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ ও ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পাবনায় মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয়। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত হয় জেলা বোর্ড। যখন কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে, তখন স্বভাবতই এ জেলা ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী মহারাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনাধীনে চলে যায়।
১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে পাংশা, খোকসা ও বালিয়াকান্দ্রি এ তিনটি থানা নিয়ে পাবনার অধীনে কুমারখালী মহকুমা গঠন করা হয়। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়া থানা এ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে পাংশা থানা ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমায় এবং কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া মহকুমার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এভাবে এ জেলার দক্ষিণ সীমানা হয় পদ্মা নদী। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে কুমারখালী থানা সৃষ্টি হলে তা ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনার একটি মহকুমা হয়। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহকুমা অবলুপ্ত করে কুষ্টিয়া মহকুমার অংশ করা হয়। ১৮৭৯-তে পাবনা জেলায় দায়রা ও জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে কয়েকটি থানা বদলে যায়।

পাবনা নামের উদ্ভব সম্পর্কে বিশেষভাবে কিছু জানা যায় না। তবে বিভিন্ন মতবাদ আছে। প্রত্নতাত্ত্বিক কানিংহাম অনুমান করেন যে, প্রাচীন রাজ্য পুণ্ড্র বা পুণ্ড্রবর্ধনের নাম থেকে পাবনা নামের উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। তবে সাধারণ বিশ্বাস, পাবনী নামের একটি নদীর মিলিত স্রোতধারার নামানুসারে এলাকার নাম হয় পাবনা। আবার পবন ডাকাতের নামানুসারে নতুবা পাবমা নামের তন্তু জাত থেকে পাবনার নামকরণ হতে পারে। রাধারমন সাহা, বদরুদ্দৌজা চৌধুরী ও টিকে হামিদের চলনবিলের ইতিকথা, জেলা পাবনার ইতিহাস ও পাবনা জেলার ইতিবৃত্ত বইগুলোতে পর্যায়ক্রমে পাবনার নামকরণে নানা মত রয়েছে।

দিনটি পালন উপলক্ষে র‌্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা করেছে পাবনাইয়া নামের একটি সংগঠন। সকাল সাড়ে ৯টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর