মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় এক বছর আগে ১০ বেডের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীরা। চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল চত্ত্বরে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
অপরদিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে রোগী ও তার স্বজনদের তিক্ততা বাড়ছে।
জানা যায়, সরকারের নির্দেশে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হলেও জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা হয়নি এই এক বছরের মধ্যে।
এদিকে জুন মাসের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে গাংনী হাসপাতালের করেনা ওয়ার্ডের বিষয়টি আবার সামনে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার করোনা ওয়ার্ড আছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে তা না পেয়ে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা দু’জন রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। এর পরে হাসপাতালের ভেতরে নিপোর্ট সেন্টারে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়।
হাসপাতালে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, গাংনী হাসপাতাল রেফার নামে পরিচিতি হচ্ছে। সব ধরনের রোগী এখান থেকে রেফার করা হয়। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার প্রতি সাধারণ মানুষের চরম খারাপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের ৩০টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র সাত জন। এর মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগে ডিউটির জন্য তিন জন চিকিৎসক নিয়োজিত। এই কয়েকজন চিকিৎসকের পক্ষে জরুরি বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোর সামলানো প্রায় অসম্ভব।
জানা যায়, করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড পরিচালনার মতো চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম মেলেনি এক বছরেরও। নেই ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেন প্লান্ট আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম।
চিকিৎসা অভাবে সম্প্রতি উপসর্গ নিয়ে দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদেরকেই সামলাতে হচ্ছে এসব রোগী। অপরদিকে করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা ও ভর্তি রোগীদের চাপে নাজেহাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তি আর বেহাল দশায় রোগী ও স্বজনদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তিক্ততা এখন নিত্যসঙ্গী।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হামিদুল ইসলাম জানান, এখন যে রোগীগুলো আসছেন তাদের বেশিরভাগের করোনা উপসর্গ রয়েছে। আমাদের কাছে যা আছে তা দিয়েই চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ হাসান শাওন বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল পেলে আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।
হাসপাতালের বেহাল অবস্থার বিষয়টি জানতে চাইলে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান্য পদের জনবলের শূন্য পদ পূরণ করার জন্য কয়েক দফা ডিও দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ে একটি অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণের চেষ্টা চলছে।