রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণে বেজেছিল তান— 'আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা, নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।' বেজেছিল কাজী নজরুল ইসলামের মনেও— 'এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে, এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে।'
আজ পয়লা ভাদ্র, সৌন্দর্যের ঋতু শরতের প্রথম দিন। শরৎ শুভ্রতার প্রতীক। সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা মিলেই এ ঋতু। এই ঋতুতেই প্রকৃতি সাজে নতুনরূপে। কাশফুলের শুভ্রতার পাশাপাশি শেফালি, মালতি, কামিনী, জুঁই, টগর মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় রূপসী বাংলার অবারিত সৌন্দর্যের কথা। গল্প, কবিতা, উপন্যাসের পৃষ্ঠায় কবি-সাহিত্যিকরা শরৎকে নিজেদের সৃজনের খোরাক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
প্রকৃতির রূপবদলে সব সময়ই ফুলের ভূমিকা অনেকখানি। এই শরতে নানা রকম ফুলের বর্ণিল উচ্ছ্বাস, প্রস্ফুটন আর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সচরাচর বর্ষার ফুল ফোটাই অব্যাহত থাকে এই শরতে। শরতের ফুল মূলত তিনটি-কাশ, শিউলি ও পদ্ম। শরতের শেষ দিকে ফোটে ছাতিম ফুল। খালে-বিলে-ঝিলে ফোটে সৌন্দর্যবর্ধক লাল শাপলা-শালুক। আরও ফোটে কলমি ফুল। বর্ষার ফুলের মধ্যে কামিনী তো আছেই। দু-চারটি গন্ধরাজও থাকবে। চেরিও থাকবে এই সময়টায়।
প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আকৃষ্ট করেছিল এই ঋতুর শিউলি ফুল। শরৎ দেখতে গিয়ে শিউলি আর শিউলি দেখতে গিয়ে শরৎ দেখেছেন তিনি। আবেগে আবিষ্ট হয়ে লিখেছেন তিনি- 'শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ওই/ এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই।'
এই শরতে উদযাপিত হয় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে ঢাক। সেই ঢাকের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় কাশফুল। শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয় এই শরতেই। এ ঋতুর শেষ দিকে ঘাসের ডগায় পড়তে থাকে শিশির বিন্দু।
তবে ব্যস্ত এ যান্ত্রিক নগরীর বাসিন্দারা শরতের এ সৌন্দর্য থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। অতীতে শরৎ বরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ সাংস্কৃতিক এলাকাগুলোতে সংস্কৃতিকর্মীরা আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠলেও, এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের মতো জনসমাগম করে কোনো আয়োজন থাকছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংক্রমণ কমার পর সুবিধাজনক সময়ে শরৎ বরণ করবে বিভিন্ন সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।