রাজবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ (০৩ সেপ্টেম্বর) ও রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টেই বেড়েছে পানি। পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে রাজবাড়ীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলগুলোতে ঢুকে পড়ছে পানি। ফলে পানিবন্দী মানুষদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের ১ হাজার ৪৫ হেক্টর ফসলি জমি।
শুক্রবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টায় পরিমাপ করা তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টের পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ পয়েন্টে পদ্মার পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টের পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। আর সদরের মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে তা বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে নিন্মাঞ্চলের ১ হাজার ৪৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন, রোপা আউশ, আগাম সবজি, আখ বীজতলা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল।
এদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর, বরাট, খানগঞ্জ, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর, সেনগ্রাম, কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর, রতনদিয়া, হরিণাবাড়িয়ার চর, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য, ওষুধসহ গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী মানুষ সারাদিন পানির মধ্যে অবস্থান করায় ঘা-পাঁচড়া দেখা দিতে শুরু করেছে।বাথরুম তলিয়ে যাওয়ায় নারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
পানি বাড়ায় জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সদরের গোদারবাজার, চর সেলিমপুর, গোয়ালন্দের দেবগ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিলীন হচ্ছে মসজিদ, বসতভিটাসহ জনপদ। সব মিলিয়ে বন্যা ও ভাঙন কবলিতরা চরম সংকটে দিন পার করছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, জেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি উপজেলায় ২১৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসের মাধ্যমে চাহিদা পেলে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।