'মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে' কিংবা ' আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' অথবা 'আমি কূলহারা কলঙ্কিনী'র মতো অসংখ্য তুমুল জনপ্রিয় গানের জনক একুশে পদক প্রাপ্ত বাউল শাহ আব্দুল করিমের আজ মৃত্যুবার্ষকী। শাহ আবদুল করিম ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলার বাউল গানকে নতুন দিশা দেওয়া এই গুণী শিল্পী ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রবিবার নানা কর্মসূচি নিয়েছে উজানধল শাহ আবদুল করিম পরিষদ। শিল্পীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল, জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা সভা এবং করিমগীতির আসর।
দারিদ্র্য ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধেভাবে।
বাউল শাহ আব্দুল করিম তার জীবদ্দশায় প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁর গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তাঁর গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। তিনি আধ্যাত্নিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।
শাহ আবদুল করিমকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। এ ছাড়াও তিনি রাগিব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার, লেবাক অ্যাওয়ার্ড, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননাসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গান- বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না, তুমি রাখ কিবা মার, ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপংখী নাও, তোমার কি দয়া লাগেনা, আমি মিনতি করিরে, তোমারও পিরিতে বন্ধু, সাহস বিনা হয়না কভু প্রেম, মোদের কি হবেরে, মানুষ হয়ে তালাশ করলে, আমি বাংলা মায়ের ছেলে, আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, কোন মেস্তরি নাও বানাইছে, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, মন মিলে মানুষ মিলে, সময় মিলেনা, সখী তুরা প্রেম করিওনা, কাছে নেওনা ,দেখা দেওনা, মন মজালে,ওরে বাউলা গান, আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে, নতুন প্রেমে মন মজাইয়া, বসন্ত বাতাসে সইগো, আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু, মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও, আমি তোমার কলের গাড়ি, সখী কুঞ্জ সাজাও গো, জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে, যে দুংখ মোর মনে, হুরু থাকতে,আমরা কত খেইর (খেইল) খেলাইতাম, হাওয়াই উরে আমার, গান গাই আমার মনরে বুঝাই, দুনিয়া মায়ার জালে, দয়া কর দয়াল তোমার দয়ার বলে, আগের বাহাদুরি গেল কই, মন বানদিব কেমনে, আমার মন উদাসি, আমি তরে চাইরে বন্ধু, কাঙ্গালে কি পাইব তোমারে, বন্ধুরে কই পাব, এখন ভাবিলে কি হবে, আসি বলে গেল বন্ধু আইলনা, আমি কি করি উপায়, প্রান বন্ধু আসিতে কত দুরে, বন্ধু ত আইলনাগু সখী, আমি গান গাইতে পারি না, খুজিয়া পাইলাম নারে বন্ধু, ভব সাগরের নাইয়া।