ঘণ্টা, জাতীয় সংগীত ও পিটি প্যারেটের নিয়মানুবর্তিতা এবং মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে দেশ গড়ার শপথ ছাড়া সকাল শুরু হওয়ার অবসান হলো আজ। ঘুম ঘুম চোখের আলস্যতা ভেঙে দৌড়ে এসে কাছের বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে অন্য রকম এক শক্তি ও সজীবতায় আবার দিন শুরু হলো।
কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের স্কুল ও কলেজগুলো। ঘুম ভাঙা পাখিদের কিচিরমিচিরে যেমন সরব হয়ে ওঠে সবুজাভ বন-বনানীর সকাল। তেমনি রাজধানীসহ দেশের স্কুল-কলেজগুলো সরব হয়ে উঠেছে শ্রেণিকক্ষে পাঠ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে।
সকালে রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসে দেখা যায় বরণ সাজে সাজানো হয়েছে পুরো স্কুল ক্যাম্পাস। বেলুন আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো স্কুল ক্যাম্পাস দেখে যেন মনে হবে এক বাগিচা। স্কুলের ফটকগুলোতে চকলেট ও গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
ঠিক আটটায় শুরু হয় এ্যাসেম্বলি, সীমিত কিছু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত, পাঠ করা হয় শপথ। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এই স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গনে।
দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। রাখা হয় ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে নাচ ও গানের আয়োজন রাখা হয়।
সরকারি নির্দেশনা ও স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাসাধ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান শুরু হয়।
উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শাখার সহকারী অধ্যাপক আসমা খাতুন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এতদিন পরে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে এটা আমাদের আবেগতাড়িত করছে। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের গোলাপ ও চকলেট দিয়ে বরণ নিচ্ছি। আবেগ থাকলেও বাচ্চাদের স্বাস্থ্যবিধি ও করোনা ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে কঠোরভাবে শারীরিক দূরত্ব মানিয়ে চলার চেষ্টা করছি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই। এজন্য গোলাকার চিহ্নের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
দ্বাদশ শাখার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আজমেরী আবেদিন উচ্ছ্বাস নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা আবার আগের মতো শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠগ্রহণ করতে পারব, বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হবে। এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না আজকের দিনের জন্য।
প্রাইমেরী শাখার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লুবনা হাবিব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আজ আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হবে প্রায় দুই বছর পরে। স্কুলে আসার খুশিতে রাতে ঘুম হয়নি। আমি একটু আগেই চলে এসেছি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এখনও এসে পৌঁছায়নি।
সরাসরি পাঠদানের একটা আলাদা আত্মতৃপ্তি আছে উল্লেখ করে একই প্রতিষ্ঠানের দ্বাদশ শাখার রসায়নের প্রভাষক জেবুন্নেসা জানান, আজ শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পেরে পুরনো সেই আত্মিক তৃপ্তি অনুভব করছি। এত দিন অনলাইনে শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত থাকলেও সরাসরি ক্লাসের যে তৃপ্তি সেটি আমি পাইনি। যদিও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তাদের 'জিকজ্যাক' প্যাটার্নে বসানো হয়েছে। অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই যদিও কিন্তু নতুন পরিবেশ আর পরিস্থিতিতেও আমরা তৃপ্ত।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী অভিভাবক উম্মে সালমা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমার সন্তানেরা বাসায় থাকত থাকতে ট্রমাটাইজ হয়ে গেছে। ওরা এখন স্কুলে এসে মুক্ত পরিবেশ পাবে এবং সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পাবে। এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।
সোমবার হবে পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান।
উল্লেখ্য,রোববার পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির তিনটি ক্লাস শুরু হবে। একইভাবে একই সময়ে তৃতীয় শ্রেণির পর্যায়ক্রমে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার হবে পঞ্চম ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা শেষে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে মূল পাঠদান শুরু হবে। ক্লাস শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
বৃহস্পতিবারও সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে অবহিত করে ক্লাস শুরু হবে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
সকালে প্রথম শিফটে করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে দ্বিতীয় শিফট দুপুরের পর শুরু হবে। দ্বিতীয় শিফট প্রতিদিন বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানায়, শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। নতুন ক্লাস রুটিনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার চারটি করে ক্লাস নেওয়া হবে।
২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার চারটি ক্লাস হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, সপ্তম শ্রেণির মঙ্গলবার, অষ্টম শ্রেণির বুধবার ও নবম শ্রেণির ক্লাস বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে।