'সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অগ্রাধিকারেরর কথা বলে দিয়েছি'

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 08:52:28

কোটা বাতিল করা হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা কোটা প্রত্যাহার করেছি। তারপরও আমার নির্দেশ আছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বলে দিয়েছি, পার্বত্য অঞ্চল বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পাহাড়ী হোক, সমতল ভূমি হোক, সেখানে যে প্রার্থী থাকবে; তারা সবসময় অগ্রাধিকার পাবে।

রাজধানীর বেইলি রোডে রোববার (২৮ অক্টোবর) বিকালে ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

এই কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না।

মন্ত্রিসভা গত ৩ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সচিব কমিটির সুপারিশে সায় দেয়।

এরপর থেকে কোটা বহালের দাবি জানিয়ে আসছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন সংগঠন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (শন্তু লারমা) প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “গোটা বাংলাদেশে পাহাড়ের ও সমতলের আদিবাসী জনগণ ভালো নেই। তারা যেন ভালো থাকতে পারে; সেজন্য আপনি ভালোভাবে ভাববেন।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যপরিধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৭৬ সালে জারি করা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ’ বাতিল করে ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বোর্ড আইন প্রণয়ন করা হয়।

এতে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমে আরও গতি সঞ্চারিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

“পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আমরা এক হাজার ৬৫৯ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছি। পাহাড়ি জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে রাঙমাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। বান্দরবানে নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। দুই দশক এই অঞ্চলটা সম্পূর্ণ অবহেলিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার কোনো পথই ছিল না বলতে গেলে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আর কোনো সংঘাত না। শান্তিচুক্তি করেছি আমরা পাহাড়ে। সে শান্তি যেন বজায় থাকে। শান্তির পথ ধরেই সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারেন।”

জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান যে জায়গা চেয়েছেন; রাঙামাটিতে… আমরা সেই বিশাল জায়গা, যেটা ছিল গণপূর্ত বিভাগের, সেটাও তাদেরকে আমরা দিয়ে দিয়েছি। আমরা আশা করি, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান এর ওপর একটা প্রকল্প তৈরি করবেন। সেখানে আঞ্চলিক পরিষদের অফিস থেকে শুরু করে, আবাসিক থেকে শুরু করে যা যা দরকার; সবকিছু নিয়ে একটা প্রকল্প তৈরি করে দেবেন, যেটা আমরা বাস্তবায়ন করব।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ঔপনিবেশিক আইন অনুসরণ না করে দেশের আইন অনুসরণ করার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘ভূমি নিয়ে যে সমস্যা.. ভূমি কমিশন করে দিয়েছি। একটা সমস্যা সেখানে হয়- ভূমি অধিগ্রহণ করতে গেলে যে নিয়মে আমরা ক্ষতিপূরণ দেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে সে নিয়মে হয় না। তার কারণ হচ্ছে; মালিকানাটা নিয়ে একটা সমস্যা।ব্রিটিশ আমলের কি আইন করে গেছে, সেটা অনুসরণ না করে আমাদের দেশের যে আইন অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ নিজের ভূমির মালিকানা যদি নিজের নামে পায়, তাহলে তারা ক্ষতিপূরণটা পেতে পারেন।’

ভূমি কমিশনের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভূমি কমিশন যেন কাজ করে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে; সেজন্য আমি তাদের সহযোগিতাটা চাচ্ছি। এখানে যতবার কমিশন করি, কাজ করতে গিয়ে বাঁধাগ্রস্ত হয়।”

বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, “হতাশ হওয়া কারণ নেই। শেখ হাসিনা থাকলে সমস্যার সমাধান হবে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর