মধ্যরাত। আরিফ ও তার স্ত্রী ঘুমিয়ে আছে। তাদের ঘরে ঢোকে লিটন ও সালাউদ্দিন। এসময় আরিফের স্ত্রীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করে লিটন। সালাউদ্দিন সে ঘটনা ভিডিও করে। আরিফের ঘুম ভেঙে গেলে সালাউদ্দিন ও লিটন পালিয়ে যায়। আর অসংলগ্ন অবস্থায় স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে দেখা যায় ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছে আরিফের মরদেহ। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের কাশিপুর গ্রামে।
বিকেল। বাড়ির পাশে হাওরে নৌকা ভ্রমণে যান নবদম্পতি। নৌকায় তাদের এক বন্ধু ও মাঝি ছিলেন। সে সময় আরেকটি নৌকায় করে গ্রামের ৮ যুবক তাদের নৌকার গতিরোধ করে। এরপর তারা তরুণী ও তার বন্ধুকে মারধর করে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে পাশের নৌকায় তুলে নিয়ে দলবেধে ধর্ষণ করে। এ সময় মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়। ঘটনাটি হবিগঞ্জের লাখাইয়ের।
রাত ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মেয়ের গৃহশিক্ষক দ্বারা ধর্ষণে শিকার হয়েছেন এক প্রবাসীর স্ত্রী। গৃহশিক্ষকের কুদৃষ্টির কারণে তাকে বাদ দেওয়া হলেও রেহাই মেলেনি। বাড়িতে কেউ না থাকায় গৃহশিক্ষক রুবেল ওই বাড়িতে ঢুকে হত্যার ভয় দেখিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন।
শুধু কুমিল্লা, হবিগঞ্জ কিংবা সিরাজগঞ্জে নয়, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ১১৭ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানায়, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৭ জন, এর মধ্যে ৫৮ জন কন্যাশিশু। কন্যাশিশুদের তিনজন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। দুজন কন্যাশিশু ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ১০ জন কন্যাশিশুসহ ১৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। একজন কন্যাশিশুসহ দুজন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। তিনজন কন্যাশিশুসহ ৮ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। এ সময় অ্যাসিডদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনে আরও জানায়, চারজন কন্যাশিশু উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে। ২০ জন কন্যাশিশুসহ ২২ জন অপহরণের ঘটনার শিকার ও দুজনকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারী পাচারের শিকার হয়েছে চারজন, এর মধ্যে যৌনপল্লীতে বিক্রি করা হয় দুজনকে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭ কন্যাশিশুসহ ৩০ জন। বিভিন্ন কারণে ১০ জন কন্যাশিশুসহ ৪৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজন কন্যাশিশুসহ ৫ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫ জন কন্যাশিশুসহ ৩৯ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৯০টি। এর মধ্যে বাল্যবিয়ের ঘটনা প্রতিরোধ করা হয়েছে পাঁচটি। ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে একটি। তিনজন কন্যাশিশুসহ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে সাতজন।