কন্যা সন্তান জন্মের খুশিতে মেয়েকে চাঁদে জমি উপহার!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2023-08-28 05:42:27

এবার প্রথম কন্যা সন্তান জন্মের খুশিতে চাঁদে জ‌মি কি‌নে মেয়েকে উপহার দি‌লেন টাঙ্গাইলের সখীপু‌র উপ‌জেলার বা‌সিন্দা আল-আ‌মিন ইসলাম সো‌হেল। তি‌নি উপ‌জেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের প্র‌তিমা বংকী গ্রা‌মের সা‌দিকুর রহমা‌নের ছে‌লে। মে‌য়ের বয়স কম থাকায় বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকা‌লে তি‌নি স্ত্রীর হা‌তে চাঁদে কেনা জ‌মির কাগজপত্র বু‌ঝি‌য়ে দেন।

আল-আ‌মিন সো‌হেল জানান, গত ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার আমার সংসার আ‌লো‌কিত ক‌রে কন্যা সন্তা‌নের জন্ম হয়। তার নাম রে‌খে‌ছি আ‌লিশা জাহান। কন্যা আ‌লিশা জ‌ন্মের পর থেকেই তা‌কে ব্যতিক্রমী কী উপহার দেওয়া যায় এমন এক‌টি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমেরিকাতে এক মামা বসবাস করেন। পরে তাঁর মাধ্যমে অনলাইনে (লুনারল্যান্ড ডটকম) চাঁদে এক একর জমির অর্ডার দিয়েছিলাম। সেই জমির কাগজপত্র আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। বর্তমানে আমার মেয়ে আলিশা জাহান অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় আমার নামেই জমিটুকু ক্রয় করা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তার নামে কাগজপত্র করা হবে।

আল আমিন সোহেল আরও জানান, জমিটুকু ক্রয় করতে সব মিলিয়ে আমার দুইশত ডলার খরচ হয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। মেয়েকে চাঁদের জমি উপহার দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। পরিবারের লোকজনও খুশি হয়েছে।

দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহআলম সিকদার বলেন, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ এখনো কন্যা সন্তানকে এক প্রকার বোঝা মনে করেন। সেখানে আলামিন নামের ওই যুবক কন্যা সন্তান জন্মের খুশিতে চাঁদের জমি কিনে উপহার দিয়েছেন। বিষয়টি অবশ্যই সমাজের অন্যান্যদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে এবং কুসংস্কার দূর করতে উৎসাহিত করবে।

এ ব্যাপারে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী আসিফ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে কিভাবে আর কার মাধ্যমে সে চাঁদের জমি কিনেছেন সে বিষয়টি আমি জানি না।

তবে বিবিসি ও ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘মুন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে বলা হয়, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটিকে শুধু বিশ্ববাসীর শান্তির স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে এবং চাঁদে যদি কেউ কোনো স্টেশন স্থাপন করতে চায়, তাহলেও জাতিসংঘকে আগে জানাতে হবে।

মুন অ্যাগ্রিমেন্টে বলা হয়, ‘চাঁদ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের সাধারণ উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতি’ এবং কেউ যদি এসব সম্পদের অপব্যবহার করে, তাহলে তা প্রতিহত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। মুন অ্যাগ্রিমেন্টে যেহেতু চাঁদের উত্তরাধিকার হিসেবে ‘সমগ্র মানবজাতির’ কথা বলা হয়েছে, তাই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন চাঁদে ব্যক্তিগত ও করপোরেট মালিকানা নিষিদ্ধ।

ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, চাঁদের কোনো খনিজ সম্পদের উত্তোলন এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটি স্পেস ওয়াচডগ বা নিয়ন্ত্রকের অধীনে হতে হবে এবং এ থেকে যা লাভ হবে, তার একটা অংশ তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেওয়া হবে। এই চুক্তিতে চাঁদে কোনো ধরনের অস্ত্র পরীক্ষাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের সংবাদ এবং জাতিসংঘের ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদে কেউ জমি কিনতে পারে না। তবে কিছু দেশের নাগরিক আইন বা চুক্তির ফাঁকফোকর বের করে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে জমি বিক্রির নাম করে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। যাঁরা কিনছেন, তাঁরা আসলে প্যাকেটভর্তি বাতাসই কিনছেন!

এ সম্পর্কিত আরও খবর