দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। মৃত্যু কম হলেও রোগী ও শনাক্ত হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে গত সাত দিনে করোনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্ত হার বেড়েছে দ্বিগুণ। অথচ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার তৎপরতা নেই। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ দফা নির্দেশনা মানার আহ্বান করা হলেও চলছে নির্বাচন, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুরোদমে। বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক, গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাট সর্বত্র উপচেপড়া ভিড়।
গত মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিগগিরই বিধিনিষেধ আরোপ করার চিন্তাভাবনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধ বিলম্ব করলে বিপদ বাড়বে।
গত ২৪ ঘণ্টায় টানা সাড়ে তিন মাস পর শনাক্ত হার সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে। এর আগে গত ২ জানুয়ারি এ হার ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। সর্বশেষ শনাক্ত হার এর চেয়ে কম ছিল ২০ সেপ্টেম্বর, ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অথচ শনাক্ত হার কমতে কমতে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ১ শতাংশের নিচে নেমে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়। পরে সেখান থেকে বাড়তে থাকলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শনাক্ত হার চার শতাংশের নিচে ওঠানামা করছিল। কিন্তু পরে গত শুক্রবার শনাক্ত হার বেড়ে ৫ শতাংশের ওপরে ওঠে এবং একদিন পর গতকাল এই হার আরও বাড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিধিনিষেধ আরোপ করতে গেলে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে যুক্ত করতে হবে। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে দ্রুততম সময়ে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে বিধিনিষেধ দ্রুততম সময়ে আরোপ করা প্রয়োজন। বিলম্ব করলে বিপদ বাড়বে। এর আগেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে বিলম্বের কারণে সংক্রমণ সর্বত্র ছড়িয়েছিল। এবারও তেমন অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় চলতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দোকানপাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে মাস্ক পরতে হবে। না পরলে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১১৬ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এর আগে এক দিনে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১৭৮ জন শনাক্ত হয়েছিল গত ২৯ সেপ্টেম্বর। এর আগে গত শুক্রবার এক দিনে ১ হাজার ১৪৬ জন শনাক্ত হয়েছিল এবং মৃত্যু হয় ১ জনের। এরও আগে গত ১ জানুয়ারি রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩৭০ জন এবং মৃত্যু হয় ৪ জনের। অর্থাৎ গত ৮ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনগুণের বেশি বেড়েছে।
এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২০৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৪ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৭ হাজার ১৮০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৯৯ জনের। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১২ হাজার ২৭৩ জনের, যা সারা দেশে মোট মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৪৮ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৩ শতাংশ।