বগুড়া থেকে গ্রেফতারকৃত ঢাকায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের অন্যতম আসামি শুটার মাসুম ওরফে আকাশকে (৩৫) আর আধাঘণ্টা পার হলেই আটক করা যেঙতো না বলে জানিয়েছেন জেলার সদর থানা পুলিশ।
বগুড়া শহরের এক হোটেলের রেজিস্টারে নাম পরিচয় এন্ট্রি না করেই রাত্রী যাপন করা মাসুম সকাল ৯টায় কক্ষ ছেড়ে চলে যেতেন। কিন্তু তার আধাঘণ্টা আগেই সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আবাসিক হোটেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে গেলে নিজেকে মামুন বলে পরিচয় দেন। কিন্তু সদর থানা পুলিশের কাছে থাকা মাসুমের
ছবির সাথে চেহারা মিল থাকায় পুলিশ তাকে আটক করে। তবে এসময় পুলিশের সাথে তর্কে না জড়িয়ে নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন এবং ঠাণ্ডা মাথায় পুলিশের সাথে হোটেল থেকে বের হয়ে আসেন।
সোমবার (২৮ মার্চ) বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী এ তথ্য জানিয়েছেন।
যে ভাবে মাসুম ওরফে আকাশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন:
বগুড়া সদর থানা পুলিশ সুত্রে জানাগেছে, রোববার (২৭ মার্চ) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের সাতমাথা এলাকায় খাজা নামের একটি আবাসিক হোটেলে আসামি শুটার মাসুমের অবস্থানের কথা জনতে পারেন পুলিশ।
এরপর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করেন। কিন্তু শহরের সাতমাথা ও তার আশেপাশে খাজা আবাসিক নামের কোন হোটেল খুঁজে পান না। এক পর্যায় পুলিশ জানতে পারেন চারমাথা বাস টার্মিনাল এলাকায় খাজা হাইওয়ে মোটেল নামে আবাসিক হোটেল রয়েছে। রবিবার সকাল ৮টার পর পরই পুলিশের দলটি খাজা হাইওয়ে মোটেলে গিয়ে দেখেন রেজিস্টারে মাসুম ওরফে আকাশ নামের কোন ব্যক্তির নাম এন্ট্রি নাই। এরপর পুলিশ হোটেলের সব কয়টি কক্ষ বাহির থেকে আটকিয়ে দিয়ে তল্লাশি শুরু করে। হোটেলের দোতলায় ১০১ নম্বর কক্ষে তল্লাশির জন্য পুলিশ নক করলেও ভেতর থেকে কোন সাড়া পায় না। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশের প্রস্তুতি নেয়। ১০ মিনিট পর ভিতর থেকে খালি গায়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়া এক যুবক দরজা খুলে দেন। পুলিশ নাম জিজ্ঞেস করলে নিজেকে মামুন বাড়ি ঢাকা বলে পরিচয় দেন। কিন্তু পুলিশের কাছে থাকা ছবির সাথে চেহারা মিলে যাওয়ায় দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর মাসুম পুলিশকে জানায় ঢাকায় জোড়া খুনের সাথে তিনি সরাসরি জড়িত। ঘটনার সময় মাসুম একাই এলোপাথাড়ি ১২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এরপর সেখানে থেকে অস্ত্রটি ঢাকাতেই লুকিয়ে রাখে এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে হাতিরঝিলে ফেলে দেয়। ঢাকা থেকে পালিয়ে হিলি অথবা জয়পুরহাট জেলার কোন সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা ছিল মাসুমের। এজন্য তিনি বগুড়ায় আসেন।
যেভাবে হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেন মাসুম:
খাজা হাইওয়ে মোটেল নামের আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার আইয়ুব আলী জানান, মোবাইল ফোন কোম্পানীতে চাকরি করেন রাজন নামের এক যুবক মাঝে মধ্যেই হোটেলে থাকতেন। সেই সুবাদে রাজন হোটেলে পরিচিত।শনিবার (২৬ মার্চ) রাজন হোটেলের ১১১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেন। রাজন হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান ঢাকা থেকে তার একবন্ধু আসবেন। তার জন্য একটি কক্ষ রাখতে বলেন। রাজনের কথায় হোটেল কর্তৃপক্ষ ৪০০ টাকা ভাড়ায় ১০১ নং কক্ষটি ফাঁকা রেখে দেন। রাত সাড়ে ১২ টায় রাজনের বন্ধু পরিচয়ে হোটেলে আসা যুবককে ১০১ নং কক্ষের চাবি দেয়া হয়। নাম ঠিকানা পরে এন্ট্রি করবেন বলে তিনি রুমে চলে যান। রাজন রোববার সকাল ৭টার দিকে কক্ষ ছেড়ে দিয়ে রাজশাহী চলে যান বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
মাসুম ওরফে আকাশকে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান বলেন, হাতকড়া লাগানোর পর তিনি নিজে থেকেই জোড়া খুনের বর্ননা দেন। মাসুম এর আগেও ঢাকাতে একজনকে গুলি করে হত্যা করে বলে পুলিশকে জানায়। এছাড়াও তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ৫টি চাঁদাবাজী মামলা রয়েছে। জোড়া খুনের পর ওই রাতেই তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে সিমকার্ড সহ হাতিরঝিলে ফেলে দেয়। পরদিন তিনটি নতুন মোবাই ফোন সেট কিনেন এবং ৩টি সিম কার্ড সংগ্রহ করেন। যার একটি নাম্বার মাসুম ব্যবহার শুরু করেন। শুক্রবার ঢাকাতেই পালিয়ে থাকার পর শনিবার সন্ধ্যায় একটি বাস যোগে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বগুড়া পৌঁছার আগেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মোবাইল ফোনে তার মা'র সাথে কথা বলেন। এরপর মাসুম মোবাইল ফোনে কারো সাথে যোগাযোগ করেননি। চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কাইশকানির গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মাসুম ওরফে আকাশ স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ঢাকার ৬০/১৫ পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় বসবাস করতেন।
তবে বগুড়ার খাজা হাইওয়ে মোটেলের একজন কর্মচারী বলেন শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে একটি প্রাইভেট কার যোগে তিনি হোটেলে আসেন। প্রাইভেট কারে আরো দুই জন থাকলেও তারা মাসুম নামের ওই ব্যক্তিকে নামিয়ে দিয়ে চলে যান।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান বলেন খাজা হাইওয়ে মোটেল থেকে মাসুমকে গ্রেফতারের সময় কক্ষ তল্লাশি করে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তার ট্রাভেল ব্যাগে থাকা কাপড় চোপড় ছাড়াও তিনটি মোবাইল ফোন পাওয়া যা। যার দুইটি সেট প্যাকেটের মধ্যেই ছিল। মাসুমের কাছে তেমন বেশী টাকাও ছিল না।
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে ঢাকার উত্তর শাজাহানপুর এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন আওয়ামীলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি। এই জোড়া খুনের পর থেকেই পুলিশ শুটার মাসুমকে ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে।