মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাবে।
বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাণিসম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও যৌথভাবে কাজ করছে। তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৃষির বিভিন্ন খাত বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ খাতে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে দৃঢ় ও গতিশীলভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রাণিসম্পদ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিনি আরো যোগ করেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই ধরিত্রীর উন্নয়নের জন্য, মানবজাতির উন্নয়নের জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা উচিত। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সর্বোত্তম ধরিত্রীর গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন খাতে আমাদের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের গবেষণা উন্নয়ন, অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা সম্প্রসারণ করছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটি দেশ। এ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য উন্নত দেশের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমরা মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি এবং শিগগিরই আমরা দুধ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকার দেশে গুঁড়ো দুধ আমদানিতে উৎসাহী নয়। এ জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার গুঁড়ো দুধ উৎপাদনের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করছে। গুঁড়ো দুধ, প্রাণিখাদ্য, মৎস্য খাদ্যসহ অন্যান্য খাদ্য আমদানিতে সরকার সন্তুষ্ট নয়। বর্তমানে বৈশ্বিক বৈরী পরিস্থিতির কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ও পরিবহনে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ জন্য বেসরকারি খাতকে দেশে শিল্প স্থাপনে আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকার এ খাতের উন্নয়নে নীতি নির্ধারণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি খাত আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ ও তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও গবেষণার ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা উন্মুক্ত থাকবে।
প্রাণিসম্পদ খাত বিগত ৫০ বছর ধরে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানীরা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও অবদান রাখছে। আমরা অভিজ্ঞতা, উন্নয়ন জ্ঞান ও গবেষণা বিনিময় করতে পারি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ দুদেশের মধ্যে একসাথে কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করতে পারে। এটা হতে পারে দুদেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বিনিময়সহ অন্যান্য কর্মসূচি।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেবের সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রের লাইভস্টক জেনেটিক্স এক্সপার্ট এর প্রেসিডেন্ট ড. মার্টিন সিবার। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ইউএসডিএ-এর এগ্রিকালচারাল এটাচে মেগান ফ্রান্সিস। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রাণিসম্পদ খাতের অংশীজনরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।