দেশের ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তায় করছে সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় কমিটি বন্যার্তদের সহায়তায় তৎপর ছিল। আমাদের যা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্যার্তদের পাশে থাকার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার (২২ জুন) গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পদ্মাসেতু উদ্বোধন, বন্যা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে স্মরণেকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুই জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সিলেট বিভাগের মৌলভিবাজার এবং হবিগঞ্জ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উত্তারাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, জামালপুর, শেরপুর জেলাসহ ১১টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে এটাই স্বাভাকি। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত। বন্যার পানি আমাদের কৃষি জমিকে উর্বর এবং সতেজ করে। ময়লা আবর্জনা-জঞ্জাল ধুয়ে মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। এ ধরনের বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে আমাদের দেশের মানুষ অভ্যস্থ। স্বাভাবিক মাত্রার বন্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতাও আমাদের সরকারের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। রাস্তা ঘাট নষ্ট হলে তা দ্রুত মেরামত করা হবে। কৃষকদের বীজ প্রদান করা হবে। সড়কের যেখানে কাটা হয়েছে সেগুলোতে ব্রিজ কালভার্ট করে দেওয়া হবে। যাতে করে পানি বের হয়ে যেতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের বন্যা নিয়ে বসবাস করতে হবে। সেভাবে আমাদের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে বাড়িঘর মেরামত এবং কৃষি পুনর্বাসনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা বন্যাকবলিত মানুষদের আশ্বাস দিতে চাই, সরকার আপনাদের পাশে আছে। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘কিন্তু গত সপ্তাহে সিলেটে যে বন্যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। এটাকে প্রলয়ঙ্করী বললেও ঠিক বুঝানো যায় না। সিলেট বিভাগের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে তিন দিনে ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটারে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ১২২ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।’
সরকারপ্রধান বলেন, মেঘালয় ও আসাম পাহাড়ি এলাকা। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতল ভূমি- সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করছে। এ অঞ্চলের হাওর ও নদীগুলোর স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ ও পরিবহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলোর নেই। ফলে পানি ফুলে-ফেপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করছে। এবারের বন্যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতম। বিগত একশো-সোয়াশো বছরের মধ্যে এত প্রলয়ঙ্করী বন্যা এ এলাকায় হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ নেতাকর্মীদের দুর্গত মানুষদের সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজ চালাচ্ছে। আমি নিজে গতকাল (মঙ্গলবার) সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলে ১ হাজার ২৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩০০ মেডিকেল টিম কাজ করছে। গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বন্যাকবলিথ ১১ জেলা ৯০০ মেট্রিক টন চাল, ৩ কোটি ৩৫ লাখ নগদ টাকা এবং ৫৫ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার শুকনো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির। আমরা সে ব্যবস্থাই করেছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও সাধ্যমত দুর্গত মানুষের ঘরে শুকনো এবং রান্না করার খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে।