চার বছর পার হলেও নিজস্ব ভবন পায়নি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড

, জাতীয়

তোফায়েল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-09-01 21:44:11

ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুর চার জেলা নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশের ১১তম শিক্ষা বোর্ড হিসেবে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। চার বছর পেরুলেও শিক্ষা বোর্ডটি এখনও পায়নি নিজস্ব ভবন। বর্তমানে নগরীর কাঠগোলায় পৃথক দু’টি ভাড়া ভবনে চলছে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম। এক অফিস থেকে আরেক অফিসের দুরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। দুই অফিসে সমন্বয় করে কাজ করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। প্রস্তাবিত ১৪০ জন জনবলের স্থলে রয়েছে মাত্র ৩৩ জন। জায়গা স্বল্পতা,  কম সংখ্যক জনবলসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই  কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) এসএম মোবাশ্বির হোসাইন জানান,  ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড ভাড়া বাসায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। একটি শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে অনেক জায়গার প্রয়োজন। একটি ভবনে জায়গা না হওয়ায় আমাদেরকে আরেকটি ভবন ভাড়া নিতে হয়েছে। যা একটা ভবন থেকে আরেকটা ভবনের দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। জরুরি কাজের প্রয়োজন হলে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যাওয়া আসা করতে অনেক সময়ের অপচয় হয়। যদি নিজস্ব ভবন থাকত তাহলে এ সমস্যাটা হত না। তখন এক ভবনেই সব কাজ করা যেত।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড উপ-সচিব (প্রশাসন ও সংস্থাপন) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা বোর্ড তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এত প্রতিকূলতা থাকার পরও শিক্ষা বোর্ড দেশ সেরা রেজাল্ট উপহার দিয়েছে। একটি নিজস্ব ভবনের অভাবের কারনে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা আছে। জয়গা স্বল্পতার কারণে এক কক্ষে বসে কয়েকজন কর্মকর্তাকে কাজ করতে হচ্ছে৷ স্টাফদের আবাসিক সমস্যা, যাতায়ত সমস্যা। একই জায়গায় গোডাউন ও অফিস দুটোই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক নাজমুল আলম সিদ্দিকী বলেন, যেখানে অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের জনবল রয়েছে দেড়শ জনের বেশি সেখানে আমাদের এখানে জনবল রয়েছে মাত্র ৩৪-৪০ জন। এই কম সংখ্যক জনবল নিয়ে একটি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কঠিন বিষয়। অনেক সময় তিন জনের কাজ একাই করতে হয়। সরকার যদি চাহিদানুযায়ী জনবল নিয়োগ দিত তাহলে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন কমিটির যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহম্মেদ লিটন বলেন, অনেক কষ্টে অর্জিত ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব ভবন না হওয়াটা দুঃখজনক। দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের পর আমরা ময়মনসিংহকে বিভাগ হিসেবে পেয়েছি, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন পেয়েছি, একটি শিক্ষা বোর্ড পেয়েছি। কিন্তু এই বিভাগের সকল উন্নয়নমুলক কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর পরিকল্পিত বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার কার্যক্রম মুখ থুবরে পড়ে আছে। আমরা চাই না শিক্ষা বোর্ডও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকুক। সরকার যেন অচিরেই ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডকে নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে মনে করেন এই নাগরিক নেতা।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.গাজী হাসান কামাল বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ড নানা সংকটের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ভবনে জায়গা সংকট, লোকবল সংকট, আবাসিক সমস্যা, যাতায়াত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তবে এত সমস্যার পরেও আশার কথা হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অচিরেই অনুমোদন পেলে অন্যান্য স্থাপনার পাশাপাশি ১০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠবে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বোর্ড।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৯৭.৫২ শতাংশ পাশের হারে দেশের প্রথম হয় ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর