বরাদ্দ নেই, ঝুঁকি ঠেকাতে বাঁশ

, জাতীয়

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-08-31 12:24:08

কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের প্রশাসনিক মূল ভবনে ফাটল ও ধ্বস দেখা দিয়েছে। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্টার খুলে পড়ে ভেতরের রড বের হয়ে আছে। খুলে পড়া পলেস্টার ও ভবনের ধস ঠেকাতে বাঁশের খুটি দিয়ে ঠেস দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। দুই মাস আগে বাঁশের খুটি দিয়ে ঠেস দিলেও সংস্কারের অভাবে ঝুঁকি নিয়েই আতঙ্কের সাথে শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে বরাদ্দ না থাকায় এর থেকে ভালো উপায় ব্যবহার করতে পারছেনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একাদশ শ্রেণীর ক্লাস চলছে। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগ কম, তারা মাথার উপরে ধসে পড়া ছাদ ও ধস ঠেকাতে দেওয়া বাঁশের খুটির দিকে তাকিয়ে আছে। মাথার উপরের ছাদ ধসে পড়ার আতঙ্কে শিক্ষার্থীদের একটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে ওই শ্রেণিকক্ষকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন স্বয়ং কলেজের অধ্যক্ষ। পাশের শ্রেণিকক্ষে তুলনামূলক পলেস্টার ধস কম হওয়ায় শ্রেণি সংকটের কারণে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে ভবনটির পলেস্টার খসে পড়ে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ভবনটিতে বাঁশের খুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সংস্কারের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ না থাকায় উপস্থিত পলেস্টার ধসে পড়া ঠেকাতে বাঁশের খুটি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই ভবনটির মেরামত কাজে হাত দেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। কলেজটিতে বর্তমানে ১৪টি বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স, ৬টি বিষয়ে মাস্টার্স পূর্বপাঠ, ডিগ্রি পাশ ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী মিলে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। প্রায় ৬২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই প্রশাসনিক মূল ভবনে ৩২টি শ্রেণিকক্ষ, একটি অডিটরিয়াম, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ কার্যালয়সহ কয়েকটি বিভাগের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তা ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হাসান বলেন, ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও পলেস্টার ধসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। কিছুদিন আগে ভবন মেরামতের কাজ শুরু করেছিল। পরে কাজ না করে বাঁশের খুটি দিয়ে রেখেছে। এই অবস্থায় ভয় নিয়ে ক্লাস করি। ক্লাসে মন বসে না। কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুর গায়ে বাঁশের খুটি খুলে পড়েছিল। ভবনটি সংস্কার না করলে যে কোন দিন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা দাস বলেন, ক্লাস রুমের সামনে বাঁশের খুটি, ভেতরে পলেস্টার ধসে গেছে। ক্লাসে বসলে মাথায় পলেস্টার, সিমেন্ট খুলে পড়ে। আমাদের ক্লাসের পাশের রুমটায় ফাটল বেশি হওয়ায় সেটি তালা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ভবনের একদিক যদি ভেঙ্গে যায় পাশের রুমে কি আমরা বেঁচে থাকবো? খুব ভয় ভয় নিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে আসি। ভবনটি মেরামত করা জরুরী।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, এই প্রশাসনিক ভবনটি কলেজের সবচেয়ে পুরাতন ভবন। পুরাতন ভবন হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় পলেস্টার খসে গেছে। একাদশ স্রেণীর দুইটি শ্রেণিকক্ষের ছাদের বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানোর পর তারা এসে কাজ শুরু করে কিন্তু প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় তারা কাজ বন্ধ করে বাঁশের খুটি দিয়ে রেখে গেছে। কলেজে শিক্ষার্থীর তুলনায় পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই সেখানে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে ভবনটির নাজুক অবস্থার কথা শুনে আমি নিজেই সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ভবনটি সংস্কারের জন্য আমাদের কোন বরাদ্দ নেই তাই অতিরিক্ত ধস ও ফাটল ঠেকাতে আমরা বাঁশের খুটি দিয়ে রেখেছি। ওই অবস্থায় ঝুকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না করানোর জন্য কলেজ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর